ইতিহাস

জাইনাব (সা.)’র প্রাণস্পর্শী অমর ভাষণ: গণবিদ্রোহের আশঙ্কায় জিয়াদ

নূর বার্তা সংস্থা: ১৩৭৫ বছর আগে ৬১ হিজরিতে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র একমাত্র জীবিত পুত্র  হযরত ইমাম জাইনুল আবেদিন(আ.)সহ  ইমাম শিবিরের সব জীবিত ব্যক্তিদের বন্দী করে  ইয়াজিদ বাহিনী বন্দীদের প্রায় সবাই ছিলেন নারী ও শিশু তাঁদের পায়ে পরানো হয়েছিল লোহার শিকল ও হাতে পরানো হয়েছিল হাতকড়া

আগের দিন  কারবালায় নবী বংশের নিষ্পাপ ইমাম হযরত ইমাম হুসাইন (আ.), তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ.) ছাড়া সব পুরুষ সদস্য শাহাদত বরণ করেছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)র পরিবারের সদস্য ও সঙ্গীসহ ৭২ জন বিপ্লবী ও নির্ভিক মুসলমানকে নৃশংসভাবে শহীদ করার পর ইমামের মাথা মুবারক বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল নরাধমরা শুধু তাই নয় ইমামের লাশসহ শহীদদের লাশগুলোর ওপর ঘোড়া দাবিয়ে পবিত্র লাশগুলোকে দলিত-মথিত করেছিল নরপশুরা ইমাম শিবিরের আতঙ্কগ্রস্ত কয়েক শিশু ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যায়

নূর বার্তা সংস্থা: ১৩৭৫ বছর আগে ৬১ হিজরিতে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র একমাত্র জীবিত পুত্র  হযরত ইমাম জাইনুল আবেদিন(আ.)সহ  ইমাম শিবিরের সব জীবিত ব্যক্তিদের বন্দী করে  ইয়াজিদ বাহিনী বন্দীদের প্রায় সবাই ছিলেন নারী ও শিশু তাঁদের পায়ে পরানো হয়েছিল লোহার শিকল ও হাতে পরানো হয়েছিল হাতকড়া

আগের দিন  কারবালায় নবী বংশের নিষ্পাপ ইমাম হযরত ইমাম হুসাইন (আ.), তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ.) ছাড়া সব পুরুষ সদস্য শাহাদত বরণ করেছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)র পরিবারের সদস্য ও সঙ্গীসহ ৭২ জন বিপ্লবী ও নির্ভিক মুসলমানকে নৃশংসভাবে শহীদ করার পর ইমামের মাথা মুবারক বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল নরাধমরা শুধু তাই নয় ইমামের লাশসহ শহীদদের লাশগুলোর ওপর ঘোড়া দাবিয়ে পবিত্র লাশগুলোকে দলিত-মথিত করেছিল নরপশুরা ইমাম শিবিরের আতঙ্কগ্রস্ত কয়েক শিশু ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যায়

  

ইয়াজিদ সেনারা ইমাম শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন দিয়েছিল এবং নারীদের অলঙ্কার ছিনিয়ে নেয়াসহ লুটপাট চালায় কান্নারত শিশুদের মারধোর করে তারা  ইমামের জিনিসপত্র ও উটগুলো লুট করে এমনকি নবী-পরিবারের মহিলাদের বোরকাগুলোও লুট করেছিল নরাধমরা এবং তাঁদেরকে খালি পায়ে হাঁটিয়ে বন্দীদের মত সারি বেঁধে নিয়ে যায় হয় কুফা ও দামেস্কের দিকে তারা ৭২টি বর্ষার আগায় বিদ্ধ করে ৭২ জন শহীদের ছিন্ন মস্তক

নবী-পরিবারসহ সব বন্দীকে কারবালার ময়দান ঘুরিয়ে কুফার দিকে নেয়া হয়েছিল যাতে তাঁরা ময়দানে পড়ে থাকা নিজ পরিবার ও আপনজনদের মস্তকবিহীন এবং ছিন্ন-ভিন্ন লাশ দেখে মানসিক কষ্ট পান (আল্লাহর চির-অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকুক সেইসব খোদাদ্রোহী মুনাফিকদের ওপর যারা নবী-পরিবারের ওপর সব ধরনের কষ্ট দেয়ার পাশাপাশি তাঁদের নারী ও শিশুদের ওপরও এইভাবে মানসিক কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করেছিল)

কুফায় ইবনে জিয়াদের দরবারসহ নানা স্থানে এবং দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে বন্দী অবস্থায়  ইমাম হুসাইন (আ.)র বোন হযরত জাইনাব (সা.) যেসব সাহসী বক্তব্য রেখেছিলেন তা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে

কুফায় তাঁর ভাষণ শ্রবণকারী একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছিল, আল্লাহর শপথ, “এমন আর কোনো লজ্জাশীলা নারীকে কখনও এমন ভাষণ দিতে শুনিনি” তাঁর ভাষণে ছিল পিতা হযরত আলী (আ.)র বীরত্ব, বাগ্মিতা ও নারীসুলভ লজ্জাশীলতা

কুফা নগরীর প্রবেশ-দ্বারের কাছে মাত্র দশ-বারোটি বাক্যে তিনি তাঁর ভাষণ শেষ করেছিলেন কুফাবাসীরা তাদের প্রতি জাইনাব(সা.)র যৌক্তিক ও মর্মস্পর্শী তিরস্কার শুনে অনুশোচনা ও বিবেকের দংশনের তীব্রতায় নিজেদের আঙুলগুলো মুখে ঢুকিয়ে কামড়াচ্ছিল এখানে নারীসুলভ মর্যাদা বজায় রেখে সাহসী বীর নারী ইমাম হুসাইন (আ.)র কন্যা ফাতিমা (সা. আ.) একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছিলেন সে সময়ও সবাই অশ্রু-সজল হয়ে পড়ে

হযরত জাইনাব (সা.) কুফাবাসিকে তিরস্কার করে বলেছিলেন, ” তোমরা নিজেদের জন্য চিরন্তন অপরাধ ও লজ্জা রেখে এসেছ এবং চিরন্তন লাঞ্ছনা খরিদ করেছ তোমরা কোনোদিনই এ লাঞ্ছনা দূর করতে সক্ষম হবে না আর কোনো পানি দিয়েই তা ধুয়ে ফেলতে পারবে না কারণ, তোমরা হত্যা করেছ হুসাইনকে যিনি হচ্ছেন খাতামুন্নাবিয়্যিনের(সা.)র কলিজার টুকরা, বেহেশতে যুবকদের নেতা

জাইনাব (সালামুল্লাহি আলাইহা)সহ নবী পরিবারের বন্দীদেরকে কুফায় ইবনে জিয়াদের দরবারে নিয়ে আনা হলে জিয়াদ তাঁকে বিদ্রূপ করে বলেছিল: সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তোমাদের লাঞ্ছিত করেছেন, তোমাদের পুরুষদের হত্যা করেছেন এবং তোমাদের বাগাড়ম্বরকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন সঙ্গে সঙ্গে জাইনাব (সা.) জবাব দিয়েছিলেন: “সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নবী মুহাম্মাদ(সা.)র বদৌলতে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন এবং আমাদেরকে সব অপবিত্রতা থেকে মুক্ত করেছেন অবশ্যই ফাসেক লাঞ্ছিত হবে এবং ফাজের বা পাপাচারী মিথ্যা বলছে, (যার বাগাড়ম্বরের কথা সে বলছে) সে ব্যক্তি আমরা ছাড়া অন্য কেউ তাই সব প্রশংসা আল্লাহর

ইবনে জিয়াদ এবার বিদ্রূপ করে বলল: আল্লাহ তোমার ভাইয়ের সাথে যে আচরণ করলেন তা কেমন দেখলে? সে খলিফা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তাই আল্লাহ তাকে হতাশ করলেন এবং ইয়াজিদকে সাহায্য করলেন

জবাবে জাইনাব (সা.) বলেছিলেন, ” আমরা এতে উত্তম ছাড়া অন্য কিছু দেখিনি আল্লাহ আমার ভাইকে শাহাদতের মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন, এটা তথা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য…আল্লাহ তোমাকে এবং তুমি যাদের হত্যা করেছ তাঁদের সবাইকে খুব শিগগিরই বিচারের জন্য নিজ দরবারে হাজির করবেন, সেদিনের জন্য প্রস্তুত হও তুমি, সেদিন কী জবাব দিবে তুমি, সেদিনের জন্য উদ্বিগ্ন হও কে সেদিন বিজয়ী ও সফল হবে, হে যেনাকারিণীর পুত্র?”

এরপর নেকড়ের মত ক্ষিপ্ত হয়েও নির্লজ্জের মত জিয়াদ বলে, ” আমি খুশি হয়েছি, কারণ, যা চেয়েছি তা পেয়েছি

জবাবে জাইনাব (সা.) বলেছিলেন,” তুমি দুনিয়ার মাধ্যমে নেশাগ্রস্ত, প্রতারিত ও ফিতনাগ্রস্ত তুমি কি মনে করেছ হুসাইনের পরে তুমি আনন্দের সঙ্গে পৃথিবীতে চিরদিন টিকে থাকবে? স্বস্তিতে থাকবে? কখনও না, তুমি স্বস্তির মুখ দেখবে না তুমি কখনও তোমার অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হতে পারবে না হে ইবনে জিয়াদ! তুমি নিজের হাতে নিজের ওপর যে কলঙ্ক লেপন করেছ তা অনন্তকাল পর্যন্ত থেকে যাবে

এতে  দিশেহারা, অস্থির ও ক্ষিপ্ত হয়ে ইবনে জিয়াদ চিৎকার করে বলে: ” আমাকে এ নারীর হাত থেকে মুক্তি দাও; ওদেরকে কারাগারে নিয়ে যাও

ইবনে জিয়াদ ও তার দলবল জনগণের প্রতিক্রিয়া ও বিদ্রোহের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল তাই তারা জনগণের সম্ভাব্য প্রতিরোধ ও ক্ষোভ এড়ানোর জন্য নবী-পরিবারসহ কারবালার সব বন্দীদেরকে দামেস্কে পাঠানোর জন্য জনমানবহীন অচেনা পথগুলো ব্যবহার করতে তাদের সেনাদের নির্দেশ দেয়

মহাপাপিষ্ঠ ও নরাধম ইয়াজিদের দরবারে উপনীত হলে তার বেয়াদবিপূর্ণ নানা কথা ও বিদ্রূপের জবাবে হযরত জাইনাব (সা.) এক দীর্ঘ ও ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সে ভাষণের একাংশে তিনি বলেছিলেন: “আমাদের শাসন-কর্তৃত্ব (তোমার হাতে পড়ায়) তুমি মহিমান্বিত আল্লাহর সেই বাণী ভুলে গিয়েছ: কাফেররা যেন মনে না করে যে আমরা তাদের যে অবকাশ দান করি, তা নিজেদের জন্য কল্যাণকর বরং আমরা তো তাদেরকে  এ জন্যই অবকাশ দেই যাতে করে তাদের  পাপগুলো বাড়তে থাকে এবং তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি অবধারিত

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.