তাফসীর

ঐশী আতিথ্যের মাস-রমজান : ২০১৩ (৮ পর্ব)

রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। রমযানের পবিত্রতা কীভাবে নষ্ট হয় ? হ্যাঁ! যেসব কাজ ইসলাম বিরোধী,সেসব কাজ করলেই রমযানের পবিত্রতা নষ্ট হবে। আজকাল ইসলাম বিরোধী কাজের সমন্বিত চর্চার অত্যাধুনিক মাধ্যম হলো স্যাটেলাইট এবং ইন্টারনেট। এ মাধ্যমগুলো শুভ কাজের জন্যে যেমন ব্যবহারযোগ্য,তেমনি অশুভ কাজের জন্যেও। যাদের ঘরে এগুলোর চর্চা হয় তারা খুব সহজেই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন। তাই এ বিষয়টি রমযানের রহমতের সুবাতাসকে যেমন প্রবাহিত করতে পারে তেমনি দূষিতও করে দিতে পারে। যদি দূষিতই করে তাহলে তা অবশ্যই ব্যাহত করবে রমযানের মূল উদ্দেশ্যকে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে আজকের আসরে আমরা খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো।

স্যাটেলাইট এবং ইন্টারনেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যতম একটি উপহার। পৃথিবীর দূরত্বকে একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে এই প্রযুক্তি। ঘরে বসেই আপনি সমগ্র পৃথিবীর খোঁজখবর পেতে পারেন।

রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। রমযানের পবিত্রতা কীভাবে নষ্ট হয় ? হ্যাঁ! যেসব কাজ ইসলাম বিরোধী,সেসব কাজ করলেই রমযানের পবিত্রতা নষ্ট হবে। আজকাল ইসলাম বিরোধী কাজের সমন্বিত চর্চার অত্যাধুনিক মাধ্যম হলো স্যাটেলাইট এবং ইন্টারনেট। এ মাধ্যমগুলো শুভ কাজের জন্যে যেমন ব্যবহারযোগ্য,তেমনি অশুভ কাজের জন্যেও। যাদের ঘরে এগুলোর চর্চা হয় তারা খুব সহজেই বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারবেন। তাই এ বিষয়টি রমযানের রহমতের সুবাতাসকে যেমন প্রবাহিত করতে পারে তেমনি দূষিতও করে দিতে পারে। যদি দূষিতই করে তাহলে তা অবশ্যই ব্যাহত করবে রমযানের মূল উদ্দেশ্যকে। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে আজকের আসরে আমরা খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো।

স্যাটেলাইট এবং ইন্টারনেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যতম একটি উপহার। পৃথিবীর দূরত্বকে একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে এই প্রযুক্তি। ঘরে বসেই আপনি সমগ্র পৃথিবীর খোঁজখবর পেতে পারেন।

ইন্টারনেটে বা স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে যেমন ইসলাম চর্চার সুযোগ আছে তেমনি তার সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থাৎ শয়তানী চর্চারও মহাসুযোগ আছে। বিশেষ করে পশ্চিমা কিছু ওয়েব-সাইট এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এমন কিছু অনুষ্ঠান প্রচার করছে যা আমাদের নীতি-নৈতিকতার স্খলন ঘটানোর জন্যে যথেষ্ট। উলঙ্গপনা,বেহায়াপনা,অবাধ যৌনতা চর্চার নির্লজ্জতা দেখানো হয় বেশ কিছু চ্যানেলে। যুবক যুবতীরা বিশেষ করে অবিবাহিতরা এইসব চ্যানেলের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়বে-এটাই স্বাভাবিক। একমাত্র ইসলাম চর্চার মধ্য দিয়েই চরিত্র নষ্ট করার মাধ্যম এইসব চ্যানেলকে বর্জন করা যেতে পারে। পশ্চিমারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবেই এইসব চ্যানেল চালু করেছে। ভাবতেও অবাক লাগে নগ্নতা চর্চা ছাড়া যেন অর্থ উপার্জনের আর কোনো উপায় নেই!

 

 

ঘরের ড্রয়িং রুমে রিমোর্টের বোতাম টিপলেই উপভোগ করা যায় বিকৃত মনোরঞ্জনের সমূহ আয়োজন। রমযান মাসে তাই রোযা ভঙ্গ হওয়াটা খুবই সহজ। যিনি রোযা রাখবেন,তাঁকে তাই অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। কেবল রমযান মাসেই নয়,রমযানের বাইরেও যাতে এইসব চর্চা না হয়,সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে মুসলমান আর অমুসলমানদের মাঝে ইবাদাত ছাড়াও নৈতিক চরিত্রের দিক থেকে বড়ো ধরণের পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা সমাজ যেসব সংস্কৃতি চর্চা হয়,সেগুলো মুসলমানদের জন্যে সর্বাংশে পরিহার্য। পশ্চিমা সমাজে নারীদের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ। সেই সমাজের তথাকথিত আধুনিকতা ইসলামের দৃষ্টিতে নগ্নতার পর্যায়ের পড়ে। পশ্চিমা সমাজে নারীরা হিজাবমুক্ত জীবন চর্চায় অভ্যস্ত,কিন্তু মুসলমানদেরকে হিজাবের মানদণ্ড মেনেই সকল কার্যক্রম চালাতে হয়।

 

এই যে পার্থক্যগুলো,এগুলো যদি আমরা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে না পারি,তাহলে কিন্তু পশ্চিমা সংস্কৃতির অবাধ স্রোতে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিও ভেসে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদেরকে তাই সচেতন হতে হবে। আমাদের মুসলমানদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শ্রদ্ধা-সম্মান ও স্নেহের ভারসাম্যপূর্ণ যে সুন্দর একটি সম্পর্ক রয়েছে,সে সম্পর্কটি পাশ্চাত্য সমাজে নেই। সেজন্যেই পাশ্চাত্য সমাজে বলতে গেলে পারিবারিক সমাজ ব্যবস্থাটাই এখন নেই। তো যেখানে এই পারিবারিক কিংবা সামাজিক শৃঙ্খলাপূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাপূর্ণ ব্যবস্থাই নেই সেখানে যে পাশবিকতা এসে স্থান জুড়ে নেবে-তাতে আর সন্দেহ কী! আর এই বিশৃঙ্খল সমাজের চিত্রগুলো স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। ছড়িয়ে পড়ছে পাশবিকতার অবাধ চর্চার চিত্র। তাই অভিভাবকদের রয়েছে এ ব্যাপারে অনেক বড়ো দায়িত্ব।

 

সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা এবং তাদেরকে সঠিক সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা অভিভাবকদের প্রধান দায়িত্ব। বিশেষ করে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোকে সচেতনভাবে এবং সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আজকাল মোবাইল ফোনও কিন্তু চারিত্রিক স্খলনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে তা রোধ করা যাবে ? আপনার সন্তানকে মোবাইল ব্যবহার করতে না দিয়ে? না তা মোটেও ঠিক হবে না। তাহলে কি তাকে নিম্নমানের মোবাইল সেট কিনে দেবেন? তা করলে সুকৌশল অবলম্বন করতে হবে। তা নাহলে আপনার প্রতি তার এক ধরণের অবিশ্বাস,অনাগ্রহ এবং বিরক্তিই বাড়বে। তারচেয়ে বরং ছোটোবেলা থেকেই আপনার সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাকে ভালো-মন্দ,উচিত-অনুচিত,ইহকাল-পরকাল,বেহেশ্ত দোযখ ইত্যাদির ধারণা দিন। তাকে সুস্থ সংস্কৃতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন। পশ্চিমা সংস্কৃতি যে খারাপ, যুক্তির মাধ্যমে তাকে তা বুঝিয়ে দিন। ইসলাম সম্পর্কে বুঝতে দিন।

 

সন্তানের মনে যখন ডিশ-কালচার সম্পর্কে ধারণা জন্মাবে,তখন পশ্চিমা সংস্কৃতির বাজে দিক সম্পর্কে তার মনের ভেতর সুস্থ চিন্তা জাগিয়ে দিন। রমযান মাস হতে পারে এই প্রশিক্ষণের শুভ সূচনাকাল। সন্তান যদি ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে থাকে,তাহলে রমযান মাসের জন্যে তাকে নতুন একটি রুটিন করে নেওয়ার জন্যে বলুন। সেই রুটিনটি আপনি দেখেশুনে দিন এবং রুটিন অনুযায়ী তার কার্যক্রম লক্ষ্য করুন। মনে রাখবেন রুটিনে এমন শক্ত কোনো কর্মপরিকল্পনা রাখা ঠিক হবে না, যার ফলে আপনাদের সন্তানের ওপর চাপ পড়ে। বরং নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয় করণীয়সহ নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি সুষ্ঠু একটি কর্মসূচি দিন। যেখানে পড়ালেখার বিষয়টিও থাকবে, নামায, কোরআন তেলাওয়াত, ইসলামী সাহিত্য পাঠসহ টিভির শালীন ও শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখারও সুযোগ থাকবে।

 

আজকাল নেট ক্যাফে , সাইবার ক্যাফে , কফি নেট ইত্যাদি বিচিত্র নামে ইন্টারনেট ব্রাউজিং-এর জন্যে ব্যবসায়িক বহু প্রতিষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়। আপনার সন্তানকে যাতে সেখানে সময় কাটাতে না হয় সে ব্যবস্থা সম্ভব হলে আপনি বাসাতেই করে দিতে পারেন। তাহলে সে কী করছে না করছে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ থাকবে। তবে রমযান মাসে ব্রাউজিং এর ব্যাপারে কৌশলে নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে,ইন্টারনেট ব্রাউজিং এ অভ্যস্ত যারা তারা খুব সহজেই অশালীন সাইটগুলোতে প্রবেশ করতে জানে। এরফলে রমযানের পবিত্রতা যেমন নষ্ট হবে তেমনি নৈতিক চরিত্রও স্খলিত হবে। ব্যাহত হবে রহমত লাভের মহান উদ্দেশ্য। তবে ইন্টারনেটের সুস্থ ও সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধ সাধতে গেলে হিতে বিপরীত হবার আশঙ্কা থেকে যাবে।

 

সর্বোপরি নৈতিক শিক্ষাই হলো সন্তানদেরকে অনৈতিকতা চর্চা থেকে বিরত রাখার সর্বোত্তম উপায়। রমযান কী,কেন,কীভাবে এলো, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য,এর তাৎপর্য কী ইত্যাদি বিষয়ে আপনার সন্তানকে পড়ার সুযোগ দিন,তাকে বলারও সুযোগ দিন,বলার জন্যে তাকে বাহ্বা দিন,উৎসাহিত করুন। এতে করে তাকে ভিন্ন জায়গায় সময় নষ্ট করার বাজে অভ্যাস থেকে যেমন বিরত রাখা সহজ হবে,তেমনি নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার পথও সুগম হবে। সন্তানদের বই পড়ার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য রাখতে হবে, বাজে কোনো বই কিংবা পর্ণ ম্যাগাজিন বা চরিত্র হনন কারী কোনো ম্যাগাজিন পড়ছে কী না! রমযান মাস এইসব শিক্ষা ও কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্যে উপযুক্ত একটি সময়। এ সময়টাকে আমরা যেন সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি আল্লাহর দরবারে সেই তৌফিক কামনা করছি।

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.