তাফসীর

ঐশী আতিথ্যের মাস-রমজান : ২০১৩ (৬ পর্ব)

রহমতের মাস রমযান। এই মাস তাই সবার কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই চায় কীভাবে এ মাস থেকে বেশি বেশি ফায়দা হাসিল করা যায়। সবাই আন্তরিকভাবে কামনা করে নিজেকে সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করে পবিত্র একটি জীবন শুরু করতে। কিন্তু শত চাওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় তা হয়ে ওঠে না। ওঠেনা কেননা, রহমত লাভের পথ সে নিজেই হয়তো রুদ্ধ করে রেখেছে। হয়তো জানেও না কেন রুদ্ধ হয়ে গেল। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আজকের আসরে কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।

মানুষ সাধারণত ভুল করে থাকে। ভুলের উর্ধ্বে নয় মানুষ। তবে এই ভুল করার মাধ্যম বিচিত্র। অনেক সময় মানুষ হয়তো জানেও না যে সে ভুল করছে। যেমন আমরা অনেক সময় হাসতে হাসতে অপরের প্রসঙ্গে কথা বলি,কূশল জিজ্ঞাসা করি। খারাপ কথা নয়,ভালো কথাই।

রহমতের মাস রমযান। এই মাস তাই সবার কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবাই চায় কীভাবে এ মাস থেকে বেশি বেশি ফায়দা হাসিল করা যায়। সবাই আন্তরিকভাবে কামনা করে নিজেকে সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করে পবিত্র একটি জীবন শুরু করতে। কিন্তু শত চাওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় তা হয়ে ওঠে না। ওঠেনা কেননা, রহমত লাভের পথ সে নিজেই হয়তো রুদ্ধ করে রেখেছে। হয়তো জানেও না কেন রুদ্ধ হয়ে গেল। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আজকের আসরে কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।

মানুষ সাধারণত ভুল করে থাকে। ভুলের উর্ধ্বে নয় মানুষ। তবে এই ভুল করার মাধ্যম বিচিত্র। অনেক সময় মানুষ হয়তো জানেও না যে সে ভুল করছে। যেমন আমরা অনেক সময় হাসতে হাসতে অপরের প্রসঙ্গে কথা বলি,কূশল জিজ্ঞাসা করি। খারাপ কথা নয়,ভালো কথাই।

কিন্তু বলতে বলতে দেখা যায় এমন এক প্রসঙ্গ চলে আসলো,যা নিয়ে কথা বলাটা গীবত বা পরনিন্দার পর্যায়ে দাঁড়িয়ে যায়। যা কিনা মারাত্মক একটি গুনাহের কাজ। এই গুনাহের চিন্তাটাও মাথায় আসে না,অথচ আমরা দিব্যি পরনিন্দা করে যাই। পরনিন্দার সূচনাটা হয়তো অন্যভাবে শুরু হয়েছে। সেজন্যে এটাকে আর গীবত বলে মনেই হয় নি। এরকমটা যদি হয়েই থাকে তাহলে সে রহমত প্রাপ্তির পথে বাধার সৃষ্টি করবে।

 

 

পরনিন্দা খুবই বাজে একটি প্রবণতা। যারা সঙ্কীর্ণমনা,অপরের ভালো যাদের সহ্য হয় না,যারা হিংসুক কিংবা যারা অপরের মুখোমুখি হবার সাহস রাখে না তারাই মূলত পরনিন্দুক হয়ে থাকে। ইসলামকে ভালোভাবে বা যথার্থভাবে চর্চা না করার কারণেই এইসব মৌলিক মানবীয় দুর্বলতাগুলো মানুষের মাঝে বাসা বাঁধে। কেননা ইসলাম তার অনুসারীদের জন্যে চমৎকার একটি জীবন বিধান দিয়েছে। দিয়েছে একটি সুন্দর আচরণ-বিধিও। কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় তার একটি ভারসাম্যমূলক নীতি ইসলাম দিয়ে দিয়েছে। তা যদি আমরা যথার্থভাবে অনুসরণ করি তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকে না। মানবীয় যে অসৎ গুণাবলীর কথা বললাম সেগুলো যদি আমরা চর্চা করি তাহলে আমাদের পুণ্যকর্মগুলোও কোনোরকম সার্থকতা খুঁজে পাবে না। রমযান মাসেও এসব প্রবণতা আমাদের রহমত অর্জনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।

 

পরনিন্দা চর্চার এক পর্যায়ে মানুষ মিথ্যা কলঙ্ক বা অপবাদ রটাতে শুরু করে। এমন কোনো কথা নেই যে পৃথিবীতে সকল মানুষই সবাইকে পছন্দ করবে। একজন আরেকজনকে পছন্দ না-ও করতে পারে। ভালো না লাগা থেকেই তা হয়। অবশ্য ভালো না লাগার কারণ তো একটা থাকেই। তো কেউ যখন কাউকে পছন্দ না করে,তখন তার কোনো কিছুই ভালো লাগে না। এককথায় তাকে চোখের সামনে না দেখলেই তার ভালো লাগে। কিন্তু এ ধরণের মানুষ যখন চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় তখন চলন বাঁকা বলে মনে হয়। এটা এক ধরণের মানসিক সমস্যা। এই সমস্যা থেকেই ছিদ্রান্বেষী চিন্তার উদ্ভব ঘটে। ছিদ্র অন্বেষণ করে কিছু পাওয়া না গেলেই মিথ্যা অপবাদ রটানোর পালা শুরু হয়ে যায়। এরফলে দেখা দেয় সন্দেহ প্রবণতা, অবিশ্বাস এবং আস্থাহীনতা।

 

ঈমানের দুর্বলতা থেকেই নীচু মানের এইসব আচরণ বা প্রবণতার সৃষ্টি হয়। সাধারণত যারা নিজেদের বা অন্যদের মান-সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না,তারাই এইসব দুর্বলতায় ভোগে। প্রকৃত ঈমানদার মানুষ এগুলো চর্চা করবে না। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপারটি হলো দুর্বল চিত্তের এইসব ব্যক্তিরা তাদের ভুল স্বীকার করে না কখনোই। যারফলে তাদের মনের বা চিন্তার এই ত্রুটিগুলো থেকেই যায় এবং আল্লাহর সমূহ রহমত থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এইসব প্রবণতা দূর করার জন্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো প্রথমেই এই অসৎ গুণাবলীর কুফল সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। নিজের ভেতরে যে তার অস্তিত্ব রয়েছে তা মেনে নিতে হবে। আর অবাঞ্চিত বদঅভ্যাসের মূলোৎপাটন করার মধ্যে সফলতার যে আনন্দানুভূতি রয়েছে,মানসিক প্রশান্তির যে সূক্ষ্ম উপাদান ও প্রফুল্লতা রয়েছে,তা দিয়েই কু-প্ররোচনা বা কু-মন্ত্রণা প্রদানকারী অনুভূতিগুলোর ওপর বিজয় লাভ করা যাবে।

 

পবিত্র কোরআনে অপবাদ রটানোর বাস্তবতাকে ছোট্ট অথচ খুবই তীক্ষ্ণ একটি আয়াত দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। আয়াতটির বঙ্গানুবাদ দাঁড়াবে এ রকমঃ “তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? কিন্তু এটা তোমরা ঘৃণা করবে।” গীবত করাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন। এটা নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘনকারী একটি অপকর্ম। ইসলাম সবসময়ই এ ধরণের অপরাধকে নিন্দনীয় বলে গণ্য করেছে। না কেবল গণ্য করেই ক্ষান্ত হয় নি বরং প্রতিটি মুসলমানের জন্যে মিথ্যা অপবাদের দায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে বলেছে। নাহজুল ফাসাহায় বলা হয়েছে “তোমার উপস্থিতিতে যদি কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটানো হয় তাহলে তুমি অপবাদগ্রস্ত লোকটির সাহায্যকারী হও এবং অপবাদ রটনাকারীকে ঘৃণা করো,আর ঐ দলটিকে পরিত্যাগ করো।”

বিশেষ করে রমযান মাসে কারো বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো বা কারো গীবত করা আত্মবিধ্বংসী একটি মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য। অপবাদ রটানো একটা শয়তানী প্রবণতা। শয়তান যেহেতু এ মাসে দুর্বল হয়ে পড়ে সেহেতু এ মাসে গীবত করার মানে হলো ঐ গীবতকারী শয়তানের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নবী কারিম ( সা ) তাই বলেছেন,”যে ব্যক্তি রমযান মাসে কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাবে,সে তার রোযার জন্যে আল্লাহর কাছ থেকে কোনো পুরস্কার পাবে না।” অপর একটি হাদিসে বলা হয়েছে “মুসলমান হলো ঐ ব্যক্তি যার হাত এবং মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।” আল্লাহ আমাদেরকে কথা বলার সময় সংযত হবার সৌভাগ্য দান করুন। আমাদের বাহ্যিক হাত আর লেখার হাত দিয়ে অপরকে অপবাদদুষ্ট করা থেকে রক্ষা করুন।

 

সাধারণত সময় কাটানোর অবসর আড্ডাতেই এইসব বাজে প্রবণতা বেশি চর্চা হয়। রমযান মাসে তাই অযথা আড্ডাবাজিতে যোগ না দেওয়াই উত্তম। তবে হ্যাঁ,যদি সমবেত কোনো পুণ্যকাজের লক্ষ্যে একত্রিত হবার প্রসঙ্গ আসে,তাহলে ভিন্ন কথা। মোটকথা হলো, প্রথমত রমযান মাসে সময় অপচয় করা যাবে না। পরিকল্পিতভাবে সময়গুলোকে ইবাদাতের জন্যে সূচি বিন্যস্ত করতে হবে যাতে অলস সময়ের সুযোগে শয়তানী প্রবণতা চর্চার মওকা না মেলে। মনে রাখতে হবে পরনিন্দা হচ্ছে একটি আত্মিক ব্যাধি। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থাকবে। রহমতপূর্ণ রমযানে আমাদেরকে যেন আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হতে না হয়,সেদিকে খেয়াল রেখে অসৎ গুণাবলী চর্চা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তৌফিক দিন।

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.