তাফসীর

শী আতিথ্যের মাস-রমজান : ২০১৩ (৫ম পর্ব)

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উযমা খামেনেয়ী বলেছেন, রমযান মাস প্রতি বছরই আসে বেহেশতের আমেজ নিয়ে।  আমাদেরকে সুযোগ দেয় এ মাসের ঐশীভোজে নিজেদেরকে তৃপ্ত করার মধ্য দিয়ে যেন বেহেশতে প্রবেশ করি। কেউ কেউ সেই ত্রিশ দিন বেহেশতের ঐশী আমেজ উপভোগ করেন,কেউ আবার ঐ ত্রিশ দিনের বরকতে পুরো বছর জুড়েই,যেন বেহেশতের মধ্যেই কাটান কেউবা কাটান সারাজীবন। তারি পাশে আবার কেউ কেউ’রোযার ব্যাপারে উদাসীন থেকে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে নিজেদেরকে নিমজ্জিত করেন,যা একেবারেই দুঃখজনক একটি ঘটনা।’

আয়াতুল্লাহিল উযমা খামেনেয়ী রহমত ও বরকতপূর্ণ এই মাসের প্রাণসঞ্চারী কিছু আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,এই মাস রোযার মাস, কোরআন অবতীর্ণ হবার মাস, ইবাদাতের মাস, ইবাদাতের আত্মা বা প্রাণ-দোয়ার মাস, মুনাজাতের মাস,

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উযমা খামেনেয়ী বলেছেন, রমযান মাস প্রতি বছরই আসে বেহেশতের আমেজ নিয়ে।  আমাদেরকে সুযোগ দেয় এ মাসের ঐশীভোজে নিজেদেরকে তৃপ্ত করার মধ্য দিয়ে যেন বেহেশতে প্রবেশ করি। কেউ কেউ সেই ত্রিশ দিন বেহেশতের ঐশী আমেজ উপভোগ করেন,কেউ আবার ঐ ত্রিশ দিনের বরকতে পুরো বছর জুড়েই,যেন বেহেশতের মধ্যেই কাটান কেউবা কাটান সারাজীবন। তারি পাশে আবার কেউ কেউ’রোযার ব্যাপারে উদাসীন থেকে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে নিজেদেরকে নিমজ্জিত করেন,যা একেবারেই দুঃখজনক একটি ঘটনা।’

আয়াতুল্লাহিল উযমা খামেনেয়ী রহমত ও বরকতপূর্ণ এই মাসের প্রাণসঞ্চারী কিছু আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,এই মাস রোযার মাস, কোরআন অবতীর্ণ হবার মাস, ইবাদাতের মাস, ইবাদাতের আত্মা বা প্রাণ-দোয়ার মাস, মুনাজাতের মাস,

তওবা-এস্তেগফারের মাস,অপছন্দনীয় পথ থেকে ফিরে আসার মাস এবং খোদাভীতি অর্জন বা তাকওয়ার মাস….. নফস বা প্রবৃত্তির সাথে জেহাদ করার মাস, শয়তানের সাথে এবং আল্লাহর শত্রুদের সাথে সংগ্রাম করার মাস, আত্মীয়-স্বজন এবং দ্বীনী ভাইদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করার মাস, তাকওয়া সঞ্চয় করার জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণের মাস। একইভাবে এই মাস ইসলামের সাথে সুপরিচিত হবার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। পুরো বছর জুড়ে দ্বীনী কাজকর্ম আঞ্জাম দেওয়ার জন্যে যে শক্তি-সামর্থের প্রয়োজন,তার জন্যে যথাযথ বিনিয়োগ করার মহাসুযোগ এনে দেয় রমযান। আমরা যেন অবহেলা করে এই সুযোগ নষ্ট না করি।

 

রোযা সম্পর্কে গত কদিন ধরে আমরা যতো আলোচনা করলাম,তা থেকে একটি বিষয় অন্তত স্পষ্ট হয়েছে যে, রহমতের এই বসন্তের মাসে রোযা রাখতে পারাটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে এক অপরিশোধ্য করুণা। আমরা যদিও আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব বলেই রোযা রাখি,আসলে এই দায়িত্ব পালনের মধ্যে লুকিয়ে আছে খোদায়ী নেয়ামত। তাই যিনি এ মাসে রোযা রাখতে পারছেন,তাঁর জন্যে মাসটি আল্লাহর পক্ষ থেকে মহামূল্যবান এবং সুবর্ণ এক সুযোগ। অবশ্য রোযা রাখার মধ্যে কষ্ট যে নেই তা নয়। বেশ কষ্ট আছে। উত্তম এবং পুণ্যের যতো কাজ আছে,সকল কাজই কষ্টের। কষ্টবিহীন কোনো পুণ্যের কাজ নেই। কেননা মানুষ কষ্ট না করে কোনো একটি পর্যায়ে উপনীত হতে পারে না। রোযা রাখার মধ্যেও যে কষ্টটুকু রয়েছে,তা রোযা থেকে অর্জিত মুনাফার মোকাবেলায় খুবই সামান্য। রোযার কষ্টটা হলো স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা লাভ করার মতো একটি বিষয়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা রমযান মাসের রোযাকে খোদায়ী তৌফিক বলে মনে করেন। তাঁর ভাষায়-রোযা ফরয করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার , আপনার , সবার জন্যে এ মাসে আত্মগঠন করার উপযুক্ত একটা ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছেন। আসলে রমযান মাসের সবচে বড়ো যে শিক্ষা তাহলো আত্মগঠন করা। আর এই আত্মগঠন করার পথে সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ তা হলো মানুষ তার নিজের আচার-ব্যবহার,নীতি-নৈতিকতা ইত্যাদি সবকিছুকেই নিজস্ব দৃষ্টি দিয়ে দেখবে এবং ঐ আত্মদৃষ্টিটি হবে সমালোচনামূলক। অর্থাৎ মানুষ নিজেই নিজের ভুল-ত্রুটি দেখবে,সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাববে এবং সেগুলোকে কীভাবে দূর করা যায় সেই চেষ্টায় নিয়োজিত হবে। পরের সমালোচনা না করে এইরকম আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে মানুষ আত্মগঠন করতে পারে। রমযান মাস আমাদের জন্যে আত্মগঠন করার মহাসুযোগ এনে দেয়। এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত।

যে কেউই নিজের সমালোচনা নিজে করতে বসবে,সে ই নিজেকে গঠন করতে পারবে। কেননা নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো নিজেই যখন দেখতে পাবে, তখনই সে বুঝতে পারবে,উপলব্ধি করতে পারবে যে,তার ভেতরে কতো অপূর্ণতা রয়েছে,কতো ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। এইসব অপূর্ণতা,এইসব ত্রুটি-বিচ্যুতি কাটিয়ে ওঠার জন্যে তাই সে বিনয়ী হয়ে উঠবে। উদ্ধত আচার-আচরণ আর তার মধ্যে থাকবে না। অপরের সামনে নিজেকে বড়ো করে তুলে ধরার মতো অহংকার দেখাবে না। রমযান মাস হলো এইসব সৎগুণাবলী চর্চার উপযুক্ত সময়। কেননা এ মাসে মানুষ আল্লাহর রহমতে যতোই পুণ্যকাজ করতে চাইবে,করতে পারবে। শয়তান তার নেক আমলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার সুযোগ পাবে না।

তবে হ্যাঁ,আল্লাহর দরবারে নিজেকে তুচ্ছ হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সবিনয় হতে হবে। অর্থাৎ তওবা-এস্তেগফার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই পথ থেকে বিচ্যুত হলেই কিন্তু অহমবোধ চলে আসবে মনে। আর অহমিকা হলো নিজেকে ধ্বংস করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। অহমিকা প্রবণ মানুষেরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টার পরিবর্তে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে সারাক্ষণ। তারা কেবল পার্থিব জগতের অপূরণীয় চাহিদা পূরণের চেষ্টায় মগ্ন থাকেন। এরা বস্তুতান্ত্রিক পৃথিবীর বেহেশতেই নিজস্ব চাহিদা চরিতার্থ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। তাদের আচার-আচরণ তাই পাশবিক হয়ে ওঠে। পবিত্র কুরআনের সূরা মুহাম্মাদে বলা হয়েছে,নিঃসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে,সৎকাজ করেছে,আল্লাহ তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে যার নীচে রয়েছে প্রবহমান ঝর্ণাধারা। আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারাজন্তু জানোয়ারের মতো খায়দায় ভোগ-বিলাস করে,আগুনই তাদের বাসস্থান। আল্লাহ আমাদেরকে অবিশ্বাসী,উদ্ধত,ভোগ-বিলাসীদের কাতার থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন,বিনয়ীদের কাতারে শামিল করুন,আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকারীদের সমাবেশে যুক্ত করুন।

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.