ইতিহাস ইতিহাস

হযরত আলী আকবর (আঃ)-এর বীরত্ব

নূর বার্তা সংস্থা: সাইয়্যেদ ইবনে তাউস প্রণীত ‘লোহুফ’ বইয়ের ভাষ্যমতে, ৬১ হিজরির দশই মহররম ইয়াজিদের অনুগত বাহিনী ওমর বিন সা’দের নেতৃত্বে যুদ্ধ শুরু করে। এ অবস্থায় ইমাম হুসাইনের (আ.) সঙ্গীরা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে বহু ইয়াজিদি সেনাকে হত্যার পর খোদাদ্রোহী এই সেনাদলের সম্মিলিত হামলার মুখে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় একে একে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে শহীদ হন।

এ অবস্থায় ইমামের আহলে বাইত ছাড়া যখন আর কেউ বেঁচে নেই সে সময় সবচেয়ে সুন্দর অবয়ব, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী আলী বিন হুসাইন তথা হযরত আলী আকবর (আ) তাঁর পিতার কাছে এসে যুদ্ধের অনুমতি প্রার্থনা করেন। ইমাম হুসাইন তৎক্ষণাৎ অনুমতি দেন। এর পর তাঁর দিকে উদ্বেগের দৃষ্টি ফেলেন আর ইমামের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। অশ্রুসিক্ত অবস্থায় তিনি বললেন :
‘হে আল্লাহ ! তুমি সাক্ষী থাক। তাদের দিকে এমন এক যুবক অগ্রসর হয়েছে যে শরীরের গঠন, সৌন্দর্য,চরিত্র ও বাক্যালাপে তোমার রাসূলের (সা.) –এর সাদৃশ্যপূর্ণ। আমরা যখন তোমার নবী (সা.) -এর দিকে তাকানোর আকাঙ্ক্ষা করতাম তখন এ যুবকের দিকেই তাকাতাম।’ এর পর ওমর বিন সা’দের প্রতি লক্ষ করে উচ্চকণ্ঠে বললেন: ‘হে সা’দের ছেলে! আল্লাহ তোমার বংশধরকে বিচ্ছিন্ন করুন যেভাবে তুমি আমার বংশধরকে বিচ্ছিন্ন করেছ।’

আলী বিন হুসাইন দুশমনের মোকাবিলায় প্রচণ্ড লড়াই শুরু করেন। বহু সংখ্যক শত্রু সেনা হত্যা করে শ্রান্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পিতা ইমাম হুসাইনের কাছে এসে বললেন :
‘হে মহান পিতা ! পিপাসায় আমার জীবন ওষ্ঠাগত,যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় আমি ক্লান্ত,আমাকে একটু পানি দিয়ে জীবন বাঁচাতে দিন।’ ইমাম হুসাইন কান্না-বিজড়িত কণ্ঠে বললেন : ‘হায়! কে সাহায্য করবে? প্রিয় ছেলে! ফিরে যাও, যুদ্ধ চালাও, সময় ঘনিয়ে এসেছে। একটু পরেই আমার নানা মুহাম্মাদ (সা.) -এর সাথে সাক্ষাৎ করবে। তাঁর হাতের পেয়ালা এমনভাবে পান করবে যে, এরপর আর কখনও পিপাসার্ত হবে না।’

আলী ময়দানে ফিরে যান,জীবনের মায়া ত্যাগ করে শাহাদাতের জন্য প্রস্তুতি নেন। প্রচণ্ড হামলা শুরু করেন। হঠাৎ মুনকিজ বিন মুররা আবদী (আল্লাহর লানত তার উপর বর্ষিত হোক) আলী বিন হুসাইনের দিকে তীর নিক্ষেপ করেন। এ তীরের আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হয়ে পড়েন। তিনি চিৎকার দিয়ে বলেন :
‘বাবা! খোদা হাফেজ, আপনার প্রতি সালাম। আমার সামনেই নানা মুহাম্মাদ (সা.) আপনাকে সালাম জানাচ্ছেন আর বলছেন : ‘‘হে হুসাইন ! তাড়াতাড়ি আমাদের সাথে মিলিত হও ’’। এরপরই একটি চিৎকার দিয়ে তিনি শাহাদাতের শরবত পান করেন। ইমাম হুসাইন নিহত সন্তানের মাথার কাছে দাঁড়ালেন। তার গালে গাল লাগিয়ে চুমু খেলেন আর বললেন : হে বৎস! আল্লাহ সে সম্প্রদায়কে হত্যা করবে যে তোমাকে হত্যা করেছে। এরা আল্লাহর কাছে কতই না অপরাধ করেছে,আল্লাহর রাসূলের সম্মানে কতই না আঘাত হেনেছে!

বর্ণিত হয়েছে, ইমামের বোন যাইনাব তাবু থেকে বের হয়ে ময়দানের দিকে ছুটে চললেন এবং ভয়ানক চিৎকার দিয়ে বললেন : ’হে আদরের ধন! হে ভাতিজা!’ আপন ভাতিজার লাশের কাছে এসে তিনি গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদছিলেন। ইমাম হুসাইন এসে তাকে নারীদের তাবুতে ফিরিয়ে নেন। এরপরই আহলে বাইতের যুবকরা একে একে ময়দানে অবতীর্ণ হন এবং অনেকেই ইবনে যিয়াদের বাহিনীর হাতে শহীদ হন। এ সময় ইমাম হুসাইন ফরিয়াদ করে বললেন : ‘হে আমার চাচাতো ভাইয়েরা! হে আমার বংশধরগণ! ধৈর্য ধারণ করো। আল্লাহর শপথ, আজকের দিনের পর কোনো দিন অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে না।’ কবি বলেন :

‘এসেছে নিশি,পূর্ণশশী তুমি তো আসোনি
জীবন ওষ্ঠাগত,আমার জীবন হে আলী আসোনি
খাঁচার পাখি মরুর দিকে উড়ে গেলো
কিন্তু হে হোমা পাখি! তার কাছেও আসোনি
আমার শরৎ অন্তর তোমার দিদারে হতো বসন্ত
হে গোলাপ পুষ্প! কেনো তুমি আসোনি
ছড়ালাম অশ্রু,গেলাম সবার আগে তোমার গমন পথে
তোমার প্রতীক্ষায় হলাম পেরেশান তুমি তো আসোনি
অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় ছিলাম তুমি যদি আসো।
তোমার পায়ে জান করবো কুরবান,তুমি তো আসোনি।’

আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মির লেখা ‘শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস’ শীর্ষক বইয়ে বলা হয়েছে:

যখন ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাথীরা শহীদ হয়ে গেলেন এবং কেউ ছিলো না তার পরিবার ছাড়া, যারা ছিলেন ইমাম আলী (আ.), জাফর বিন আবি তালিব (আ.), আক্বীল বিন আবি তালিব (আ.) ও ইমাম হাসান (আ.) এর সন্তানেরা, তারা একত্রিত হলেন এবং পরস্পরকে বিদায় জানালেন এবং যুদ্ধ করতে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন। আলী আকবার (আ.), যার মা ছিলেন আবি মুররাহ বিন উরওয়াহ বিন মাসউদ সাক্বাফির কন্যা লায়লা, যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন।

আলী আকবার (আ.)’র নানা উরওয়াহ বিন মাসউদ ছিলেন ইসলামি দুনিয়ার চারজন সম্মানিত ব্যক্তির একজন এবং এর আগে কাফেরদের মধ্যে দুই জন সর্দারের একজন, যার সম্পর্কে কোরআন বলেছে যে সে বলেছিল, “কেন কোরআন দুই শহরের কোন ব্যক্তির ওপরে নাযিল হলো না, (যে) বিখ্যাত?” [সূরা যুখরুফ: ৩১]

তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যাকে কুরাইশরা পাঠিয়েছিলো হুদাইবিয়াতে শান্তিচুক্তি করার জন্য তাদের ও রাসূল (সা.) এর শান্তিচুক্তি করার জন্য, তখন পর্যন্ত তিনি অবিশ্বাসী ছিলেন। হিজরি নবম বছরে যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফ থেকে ফেরত এলেন, তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং অনুমতি চাইলেন যাতে নিজের শহরে ফেরত গিয়ে জন গণের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেয়া যায়। তিনি ফেরত গেলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানালেন এবং যখন তিনি নামাযের জন্য আযান দিচ্ছিলেন তখন তাঁর গোত্রের এক ব্যক্তি তাঁর দিকে তীর ছুঁড়ে এবং তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর শাহাদাতের খবর পেলেন তিনি বললেন, “উরওয়াহর উদাহরণ হচ্ছে ইয়াসীনের সেই বিশ্বাসীর মত, যে তাঁর গোত্রকে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো এবং তারা তাঁকে হত্যা করেছিলো।”
‘শারহে শামায়েলে মুহাম্মাদিয়া’তে রাসূলুল্লাহ’র (সা.) কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, “যদি কেউ ঈসা বিন মারইয়াম (আ.) এর দিকে তাকায় সে উরওয়াহ বিন মাসউদের সাথে তার সবচেয়ে বেশী মিল পাবে।”

[‘মালহুফ’-এ বর্ণিত আছে] আলী বিন হুসাইন ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে যুদ্ধের জন্য অনুমতি চাইলেন। ইমাম (আ.) তাকে অনুমতি দিলেন এবং এরপর তার দিকে ভগ্ন হৃদয়ে তাকালেন এবং তাঁর চোখ থেকে অশ্রু বইতে লাগলো এবং তিনি কাঁদলেন।

[‘তাসলিয়াতুল মাজালিস’ গ্রন্থে] বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তার দাড়ি আকাশের দিকে তুললেন এবং বললেন, “হে আল্লাহ, এ লোকগুলোর উপর সাক্ষী থাকো, যে যুবক চরিত্রে ও বক্তব্যে তোমার রাসূলের সবচেয়ে নিকটবর্তী, সে তাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যখনই আমরা চাইতাম তোমার রাসূলের চেহারা দেখতে আমরা তার দিকে তাকাতাম। হে আল্লাহ, তাদের কাছ থেকে পৃথিবীর নেয়ামতগুলো ফিরিয়ে নাও এবং তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দাও এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করে দাও। তাদের নীতিকে হেয় করো এবং তাদেরকে তাদের সর্দারদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে দিও না, কারণ তারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো আমাদের সাহায্য করার জন্য। এরপর তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।”
এরপর তিনি উমর বিন সা’আদকে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলেন, “তোমার কী হয়েছে? আল্লাহ তোমার বংশ শেষ করুন, আল্লাহ তোমার কাজকে ব্যর্থ করে দিন এবং তিনি যেন কাউকে তোমাদের উপর শক্তিশালী করেন, যে তোমাদের বিছানায় তোমাদের মাথা কেটে ফেলবে যেভাবে তোমরা আমাদের গর্ভ চিরেছ এবং আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্রতা বিবেচনা করো নি।”

এরপর তিনি একটি আওয়াজ তুললেন এবং কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ বাছাই করেছিলেন আদম ও নূহ ও ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদের, বিশ্ব জগতের ওপরে।” [সূরা আল ইমরান: ৩৩] আলী বিন হুসাইন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন এ কথা বলে, “আমি আলী বিন হুসাইন বিন আলী, আল্লাহর ঘরের কসম, আমরা রাসূল (সা.) এর সাথে আত্মীয়তা রাখি এবং শাবাস (বিন রাব’ঈ) এবং নীচ ও হীন শিমারের ওপরে শ্রেষ্ঠত্ব রাখি। আমি তরবারি দিয়ে তোমাদের আঘাত করবো যতক্ষণ না তা বাঁকা হয়ে যায়, হাশেমী আলাউই (আলীর রক্তজ) যুবকের তরবারি, আমি আমার বাবার প্রতিরক্ষা করতেই থাকবো এবং আল্লাহর শপথ, অবৈধ সন্তানের সন্তান আমাদের ওপরে কর্তৃত্ব করবে না।”
তিনি শত্রুদের বার বার আক্রমণ করলেন এবং বহু শত্রুকে হত্যা করলেন।

[‘তাসলিয়াতুল মাজালিস’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে] তিনি এতো বিপুল সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করলেন যে শত্রুবাহিনী কাঁদতে শুরু করলো। বর্ণিত আছে যদিও তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন তারপরও তিনি একশ বিশ জন শত্রুকে হত্যা করেছিলেন। ‘মানাক্বিব’-এ বর্ণিত আছে তিনি সত্তর জনকে হত্যা করার পর তার বাবার কাছে ফিরলেন অনেকগুলো আঘাত নিয়ে।

[‘তাসলিয়াতুল মাজালিস’, ‘মালহুফ’ গ্রন্থে আছে] তিনি বললেন, “হে বাবা, পিপাসা আমাকে মেরে ফেলছে এবং লোহার (অস্ত্রের ও বর্মের) ওজন আমার শক্তি শেষ করে দিয়েছে। কোন পানি আছে কি যাতে আমি শক্তি ফিরে পাই এবং শত্রুদের উপর আঘাত করি?”
[‘মালহুফ’ গ্রন্থে আছে] তা শুনে ইমাম হুসাইন (আ.) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, “হে সাহায্যকারী, হে প্রিয় সন্তান, অল্প সময়ের জন্য যুদ্ধ করো এবং খুব শীঘ্রই তুমি তোমার নানা মুহাম্মাদ (সা.) এর সাক্ষাত পাবে। তুমি তার উপচে পড়া পেয়ালা থেকে পান করবে এবং আর কখনোই পিপাসার্ত হবে না।”

[‘তাসলিয়াতুল মাজালিস’ গ্রন্থে আছে] ইমাম হুসাইন (আ.) তাকে বললেন, “হে আমার প্রিয় সন্তান, তোমার জিভ বের করো।”

এ কথা বলে ইমাম (আ.) তার জিভ তার মুখে দিলেন এবং তা চুষতে দিলেন। এরপর তিনি তাঁর আংটি আলীর মুখে দিলেন এবং বললেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত যাও এবং আমি আশা করি রাত আসার আগেই তোমার দাদা তোমার হাতে পেয়ালা উপচে পড়া একটি পানীয় দিবেন যা পান করার পর তুমি আর কখনো পিপাসা অনুভব করবে না।”

আলী আকবার যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত গেলেন এবং বললেন, “যুদ্ধের জন্য বাস্তবতাগুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে এবং তারপর এর প্রমাণগুলো, আকাশের রবের শপথ, আমরা তোমাদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হবো না যতক্ষণ না তরবারি খাপে প্রবেশ করে।” এরপর তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান যতক্ষণ না দুইশত লোককে হত্যা করেন।
[‘ইরশাদ’ গ্রন্থে আছে] কুফার সেনাবাহিনী তাঁকে হত্যা করা থেকে দূরে সরে রইলো, মুররাহ বিন মুনক্বিয আবাদি লেইসির দৃষ্টি তার উপর পড়লো এবং সে বললো, “আরবদের গুনাহ আমার উপর পড়ুক যদি সে আমার পাশদিয়ে যায় এবং তা করে যা সে করছে এবং আমি তার মাকে তার জন্য শোকার্ত না করি।” যখন তিনি সেনাবাহিনীকে আক্রমণে ব্যস্ত ছিলেন, মুররাহ বিন মুনক্বিয তার সামনে গেলো এবং একটি বর্শা ছুঁড়ে দিলো তার দিকে যা তাকে মাটিতে ফেলে দিলো। তা দেখে সেনাবাহিনী তাকে সব দিক থেকে ঘিরে ফেললো এবং তাকে টুকরো টুকরো করে ফেললো তাদের তরবারি দিয়ে।

‘মানাক্বিব’-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুররাহ বনি মুনক্বিয আবাদি হঠাৎ তার বর্শা আলী আকবারের পিঠে ঢুকিয়ে দেয় এবং অন্যরা তাকে তাদের তরবারি দিয়ে আক্রমণ করে। আবুল ফারাজ বলেন তিনি অবিরাম আক্রমণ করলেন যতক্ষণ না একটি তীর তাঁর কণ্ঠ ভেদ করলো। তিনি রক্তে ভিজে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন, “হে প্রিয় বাবা, আপনার উপর সালাম, এই যে আমার দাদা আল্লাহর রাসূল আমাকে ডাকছেন তাড়াতাড়ি করার জন্য।” এরপর তিনি একটি আওয়াজ তুললেন এবং মৃত্যুবরণ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক)।

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে, তখন ইমাম হুসাইন (আ.) আলী আকবারের পাশে এলেন এবং তাঁর নিজের গাল রাখলেন পুত্রের গালের উপর। [তাবারির, ‘তাসলিয়াতুল মাজালিস’ গ্রন্থে] হামিদ বিন মুসলিম বর্ণনা করেছে যে,আমি আশুরার দিন নিজে ইমাম হুসাইন (আ.) কে বলতে শুনেছি, “হে আমার প্রিয় সন্তান, আল্লাহ যেন তাকে হত্যা করেন যে তোমাকে হত্যা করেছে, তারা দয়ালু আল্লাহর বিরুদ্ধে কী সাহস-ই না সঞ্চয় করেছে এবং রাসূলের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে।”
[‘ইরশাদ’ গ্রন্থে আছে] ইমাম হুসাইন (আ.) এর চোখ থেকে অনেক অশ্রু ঝরতে লাগলো এবং তিনি বললেন, “দুর্ভোগ এ পৃথিবীর উপর, তোমার (শাহাদতের) পরে।” ‘রওযাতুস সাফা’- তে আছে যে, ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর পাশে বসে অনেক কাঁদতে লাগলেন যা কেউ এর আগে তাকে করতে দেখে নি।

আলী আকবার (আ.) এর যিয়ারত যেভাবে ইমাম সাদিক্ব (আ.) উল্লেখ করেছেন তাতে আছে, “আমার বাবা মা কোরবান হোক তাঁর জন্য যার মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো, যাকে হত্যা করা হয়েছিলো কোন অপরাধ ছাড়াই, আমার বাবা মা কোরবান হোক ঐ রক্তের জন্য যা আকাশে আল্লাহর বন্ধুর কাছে পৌঁছেছিলো, আমার বাবা মা কোরবান হোক আপনার উপর যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত গিয়েছিলেন তাঁর বাবার উপস্থিতিতে যিনি আপনাকে উৎসর্গ করেছেন আল্লাহর পথে, এরপর তিনি আপনার জন্য কাঁদলেন এবং তার হৃদয় পোড়া মাটি হয়ে গেলো। তিনি আপনার রক্ত আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলেন, যার এক ফোটাও ফেরত আসেনি এবং আপনার জন্য তার চিৎকার কখনো বিলীন হবে না।”

[‘মাকাতিলাত তালিবিইন’, ‘মালহুফ’, তাবারির গ্রন্থে আছে] শেইখ মুফীদ বলেন যে, সাইয়েদা যাইনাব (আ.), যিনি ইমাম হুসাইনের (আ.) বোন ছিলেন, ছুটে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন, “হায় আমার ভাই, হায় আমার ভাতিজা।” তিনি এলেন এবং নিজেকে আলী আকবার (আ.) এর লাশের উপর ছুঁড়ে দিলেন। ইমাম হুসাইন (আ.) তাকে (বোনকে) তাঁবুতে ফেরত আনলেন। এরপর তিনি যুবকদেরকে ডাকলেন, বললেন, “তোমাদের ভাইকে নিয়ে যাও।” [তাবারির গ্রন্থে, ‘মাকাতিলাত তালিবিঈন’-এ আছে] তারা তাকে শাহাদাতের স্থান থেকে আনলেন এবং ঐ তাঁবুর সামনে এনে রাখলেন যার সামনে থেকে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন।
আবুল ফারাজ বর্ণনা করেন মুগীরা থেকে যে, মুয়াবিয়া একবার জিজ্ঞেস করেছিলো, “কে খেলাফতের জন্য বেশী যোগ্য?” তাকে বলা হলো, “আপনি”। সে বললো, “না, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে এ পদের জন্য আলী বিন হুসাইন বিন আলী, যে নিজের মাঝে একত্র করেছে বনি হাশিমের সাহস, বনি উমাইয়ার উদারতা এবং (বনি) সাক্বিফের মর্যাদা।”

লেখক সম্পর্কে

Admin

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.