ইতিহাস

ইমাম মাহদী(আ.) পছন্দিত জীবন যাপন

 

নূর বার্তা সংস্থা : আমরা চিন্তা করলে দেখতে পাই যে, একদিনেই কারবালায় ইমাম হুসাইন(আ.)-এর সকল ঘটনা ঘটে। কুফা এবং বসরার জনগণ ইমাম হুসাইন(আ.)-এর হত্যার ঘটনা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিল এবং তারা নবীর পরিবারের বন্দী হওয়ার কষ্ট শুনে এতই কষ্ট পেয়েছিল যে, ঘটনাটি তাদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না।

পুরো সময়টা মুসলমানদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল। কিন্তু আমরা ১২০০ বছর ধরে মুসিবতে ভুগছি এবং ইমাম মাহদী(আ.) নিজেও কষ্টের মধ্যে আছেন। শত্রুরা তাকে আসতে দিচ্ছে না এবং তাকে বন্দি করে রেখেছে। এর থেকে বড় বন্দিত্ব আর কি হতে পারে যে, তিনি অন্তরালে রয়েছেন এবং কোথাও নিজেকে প্রকাশ করেন না।
তিনি যে, ১২০০ বছর ধরে দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছেন তা ঈমানদার মানুষদের জন্য সহ্য করা খুবই কষ্টদায়ক। এটা কি ঠিক ইমাম মাহদী(আ.) ইমাম হুসাইন(আ.)-এর মত কষ্টে রয়েছেন এবং তাও আবার দীর্ঘদিনধরে।

 

 

নূর বার্তা সংস্থা : আমরা চিন্তা করলে দেখতে পাই যে, একদিনেই কারবালায় ইমাম হুসাইন(আ.)-এর সকল ঘটনা ঘটে। কুফা এবং বসরার জনগণ ইমাম হুসাইন(আ.)-এর হত্যার ঘটনা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিল এবং তারা নবীর পরিবারের বন্দী হওয়ার কষ্ট শুনে এতই কষ্ট পেয়েছিল যে, ঘটনাটি তাদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না।

পুরো সময়টা মুসলমানদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল। কিন্তু আমরা ১২০০ বছর ধরে মুসিবতে ভুগছি এবং ইমাম মাহদী(আ.) নিজেও কষ্টের মধ্যে আছেন। শত্রুরা তাকে আসতে দিচ্ছে না এবং তাকে বন্দি করে রেখেছে। এর থেকে বড় বন্দিত্ব আর কি হতে পারে যে, তিনি অন্তরালে রয়েছেন এবং কোথাও নিজেকে প্রকাশ করেন না।
তিনি যে, ১২০০ বছর ধরে দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছেন তা ঈমানদার মানুষদের জন্য সহ্য করা খুবই কষ্টদায়ক। এটা কি ঠিক ইমাম মাহদী(আ.) ইমাম হুসাইন(আ.)-এর মত কষ্টে রয়েছেন এবং তাও আবার দীর্ঘদিনধরে।

 

তারপরও কি আমরা সেই কষ্টে কষ্ট না পেয়ে নাচানাচি এবং হাসিখুশি করব।
আমরা কতদিন আর নিজেদের গোনাহকে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিব। ইমাম মাহদীকে ভুলে যাওয়ার কারণে আর কতদিন আমরা এই মুসিবতকে সহ্য করব? আর কতদিন নিজেদেরকে প্রতারিত করব এবং অবহেলার মধ্যে নিমজ্জিত থাকব? তাহলে আর কখন আমরা সঠিক কারণকে খুজে বের করব?
আমাদের পঞ্চম ইমাম মোহাম্মাদ বাকির(আ.) বলেছেন: আল্লাহ যখন মানুষকে তাদের অন্যায়ের কারণে আজাব করেন তখন আমাদেরকে তাদের থেকে দুরে সরিয়ে রাখেন। اذاغضباللهتبارکوتعالیعلیخلقه،نحاناعنجوارهم“. (উসূলে কাফী কিতাবুল হুজ্জাত, হাদিস ৩১)
ইমাম মাহদী(আ.) শেখ সাদুককে(রহ.) বলেছিলেন: তোমাদের সকল বিষয় সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত আছি। তোমাদের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কেও আমরা জানি। তোমাদের পূর্বপুরুষরা যে সকল গোনাহ থেকে বিরত থাকত তোমাদের সময়ের অনেকে সেই গোনাহে লিপ্ত হয় এবং তারা যে সকল ওয়াদা পালন করত বর্তমানে অনেকেই সেই সকল ওয়াদা ভঙ্গ করে। কিন্তু তারা জানে না যে, তাদের এই গোনাহ ও অবাধ্যতা তাদের থেকে তাদের ইমামকে বহু দুরে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এই বিষয়টি ইমাম মাহদী(আ.) তার দীর্ঘ মেয়াদী অন্তর্ধানের প্রথম দিকে বলেছিলেন। আর এখন হাজার বছরেরও বেশী সেই সময় থেকে পার হয়ে গেছে এবং ফেতনা ফ্যাসাদ, গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার ও অবাধ্যতা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে তাহলে কিভাবে তারা তাদের ইমামে জামানাকে দেখতে পাবে?
এছাড়ও ইমাম মাহদী(আ.) হচ্ছেন আল্লাহর চোখ তিনি আমাদের সকল কর্ম সম্পর্কেঅবগত রয়েছেন। এবং সপ্তাহে দুইবার তার কাছে আমাদের আমলনামা হাজির করা হয়। আর তিনি আমাদের আমলনামা দেখে আমাদের সাথে সেইরূপ আচরণ করেন।
আপনারা কি জানতে চান ইমাম মাহদী(আ.)-এর সাথে আমাদের প্রকৃত দুরুত্ব কত বেশী এবং পরবাস ও একাকিত্ব কাকে বলে?
তাহলে এই কয়েকটি কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনুন: আমরা জানি যে, শুক্রবারের দিনে ইমাম মাহদী(আ.)-এর আবির্ভাবের সম্ভবনা সবথেকে বেশী। “یامولایهذایومالجمعهوهویومکالمتوقعفیهظهورک” (মাফাতিহুল জিনান , ইমামে জামানার শুক্রবারের যিয়ারত)
এখন শুক্রবারের দিন পার হয়ে গেলে এবং মাগরিব ঈশার নামাজও আদায় করা হল কিন্তু তারপরও ইমাম মাহদী(আ.)-এর আবির্ভাব ঘটল না। অর্থাত আরও একটি শুক্রবার পার হয়ে গেছে কিন্তু ইমাম মাহদী(আ.)-এর আবির্ভাব হয় নি। তার কিছুক্ষন পর আমাদেরকে খবর দেয়া হল যে, আলুর দাম ৫টাকা বেড়ে গেছে। এখন সত্যি করে বলুন আপনারা কোনটার জন্য বেশী চিন্তিত হবেন এবং কষ্ট পাবেন? কোন বিষয়টা নিয়ে আপনার ভাবনা বেড়ে যাবে? কোন বিষয়টি নিয়ে আপনি হতাশায় ভুগবেন?
যখন আমাদের কন্যা সন্তান স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে তার কাছে কি কখনো প্রথমে জিজ্ঞাসা করি যে, তুমি কি রাস্তায় হিজাবের সাথে ভদ্রভাবে চলাফেরা কর নাকি প্রশ্ন করি তোমার পড়া কেমন হয়েছে এবং কত নম্বর পেয়েছ?
আমাদের ছেলে সন্তানদের কাছে কি কখনো জানতে চাই যে সঠিক সময়ে তোমার নবী ও ইমামের মত নামাজ আদায় করেছ, নাকি প্রশ্ন করি তুমি কি প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়েছ?
আমাদের জীবন-যাপনের দিকে যদি লক্ষ করি সেখানে কি আমরা ইমাম মাহদী(আ.)-এর আদর্শের কোন রং ও গন্ধ খুজে পাব? ঘরের দেয়ালে যে ছবিটি ঝোলানো আছে, ঘরে যে সকল জিনিস ব্যাবহার করা হয় এবং আমাদের জীবন-যাপনের ধরন কি ইমাম মাহদী(আ.)-এর পছন্দমত?
আমাদের বৈঠকসমূহ কি ইসলাম সম্মত এবং ইমাম যেভাবে চান সেরকম, যেখানে তিনি প্রবেশ করতে পারবেন এবং আমাদের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারবেন?
নাকি এত বেশী অসামাজিক ও শরীয়ত পরিপন্থী যে ইমাম মাহদী(আ.) সেখানে প্রবেশ করাতো দুরের কথা বরং তা দেখে তিনি কষ্ট পান?
আমাদের ও আমাদের পরিবারের এমনকি বাহ্যিক অবস্থা কেমন যা ইমাম মাহদী(আ.) কবুল করবেন এবং পছন্দ করতে পারেন?
আমাদের রুজি রোজগারের পন্থা কি হালাল যাতে ইমাম মাহদী(আ.) বরকত দিবেন এবং আমাদের সাথে এক দস্তরখানায় বসে খাবার খাবেন?
মোটকথা আমাদের জীবন পন্ধতি কি সে রকম যেরকম তিনি পছন্দ করেন?
আমার এক বন্ধু বলছিলেন যে, আমি একাবর ইমাম রেজা(আ.) মাজার যিয়ারত করে বের হচ্ছিলাম তখন একজন চিতকার করে বললেন যে, চোর আমার কাটা চুরি করে নিয়ে গেছে। সবাই তার সাথে সহানুভূতির সাথে কথা বলছিলেন এবং তার সাথে কষ্ট পাচ্ছিলেন। কিন্তু যদি সেখানে কেউ চিতকার করে বলত যে, আমার ইমামে জামানা নেই, তিনি এখনও আমাদের মাঝে আসেন নি। তখন মানুষ তার দিকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকাত এবং বলত: সে পাগল হয়ে গেছে। 
এসব তো আছেই অর্থাত ইমাম মাহদী(আ.)-এর আবির্ভব হল কি না তা নিয়ে যেমন আমাদের মাথা ব্যাথা নেই, অনুরূপভাবে তিনি কি পছন্দ করেন সে বিষয়েও অমাদের কোন গুরুত্ব নেই। এরপরও আমরা যেন ইমাম মাহদী(আ.)-এর কাছে পাওনাদার, আমাদের এই সমস্যার সমাধান করুন ওমুক করুন তমুক করুন ইত্যাদি। “نحنصنایعاللهوالخلقبعدصنایعنا“. (ইহতিজাজে তাবারসী ২য় খণ্ড, পৃ:৪৬৬)
মোটকথা আমরা যেন ভুলে না যাই যে, ইমাম মাহদী(আ.) হচ্ছেন আল্লাহর চক্ষু ও তিনি আমাদের সকল কাজই দেখেন এবং সপ্তাহে দুইবার আমাদের আমালনামকে তার কাছে নেয়া হয়। অর তিনি আমাদরে আমল অনুযায়ী আমাদের সাথে আচরণ করবেন।

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.