আল-কুরআন

সূরা ফাতেহা: আয়াত ৬-৭

 

(নূর বার্তা সস্থা) সূরা ফাতিহার ছয় নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6

হে আল্লাহ্‌! আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত কর।” (১:৬(

এই আয়াতে সরল-সঠিক পথে চলার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়েছে।

এই পার্থিব জগতে মানুষের সামনে বিভিন্ন পথ রয়েছে। যেমন, পূর্বপুরুষরা যে পথে চলেছেন, সমাজ যে পথে চলছে কিংবা ধর্মহীন সেক্যুলার শাসক শ্রেণী মানুষকে যে পথে পরিচালিত করছে, কেউ কেউ দুনিয়ার বাহ্যিক রূপ ও সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য মত্ত আবার অনেকে সমাজ জীবন থেকে বেরিয়ে একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা বেছে নিচ্ছে।

 

(নূর বার্তা সস্থা) সূরা ফাতিহার ছয় নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6

হে আল্লাহ্‌! আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত কর।” (১:৬(

এই আয়াতে সরল-সঠিক পথে চলার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়েছে।

এই পার্থিব জগতে মানুষের সামনে বিভিন্ন পথ রয়েছে। যেমন, পূর্বপুরুষরা যে পথে চলেছেন, সমাজ যে পথে চলছে কিংবা ধর্মহীন সেক্যুলার শাসক শ্রেণী মানুষকে যে পথে পরিচালিত করছে, কেউ কেউ দুনিয়ার বাহ্যিক রূপ ও সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য মত্ত আবার অনেকে সমাজ জীবন থেকে বেরিয়ে একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা বেছে নিচ্ছে।

কাজেই মানুষের মনে এই প্রশ্ন আসে যে, এতসব পথের মধ্যে সঠিক পথ বেছে নেয়ার জন্য কি কোন পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন নেই?

 

হ্যাঁ, মানুষের মনে সুপ্ত এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে পবিত্র কোরআন। আল্লাহ পাক মানুষকে পথপ্রদর্শনের জন্য নবী রাসূল ও আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ যদি পবিত্র কোরআন, রাসূলে খোদা (সা.) ও আহলে বাইতের অনুসরণ করে তাহলে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। এজন্যেই আমরা প্রত্যেক নামাজে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যাতে তিনি আমাদেরকে সরল, সঠিক পথে পরিচালিত করেন- যে পথে কোন ক্ষতি ও বিভ্রান্তি নেই, তিনি যাতে ওই পথে আমাদেরকে সে পথে চলার তাওফিক দেন। সরল পথ হলো মধ্যম পথ। সরল পথ মানে সব কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন এবং যেকোন ধরনের বাড়াবাড়ি বর্জন করা। অনেকে ধর্মীয় আকিদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে থাকেন, অনেকে আচার-আচরণের দিক থেকে ভুল পদ্ধতি গ্রহণ করছেন, কেউ কেউ আবার সব কাজের জন্য আল্লাহকে দায়ী করেন; যেন পরিণতির ব্যাপারে মানুষের কোন হাত নেই। কেউ আবার সব কাজে নিজের ক্ষমতাকে চূড়ান্ত মনে করে যেন সৃষ্টি জগতের কাজ-কর্মে আল্লাহর কোন হাত নেই। অনেক কাফের আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ নবী-রাসূলদেরকে সাধারণ মানুষ এমনকি পাগল বলেও আখ্যায়িত করেছিল। অনেকে আবার হজরত ঈসা (আ.)এর মত নবীকে খোদার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এ ধরনের চিন্তা ও আচরণের অর্থ হলো রাসূল এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের নির্দেশিত পথ থেকে বিচ্যূত হওয়া।

পবিত্র কোরআন আমাদেরকে আর্থ-সামাজিক কাজ-কর্ম ও এবাদতের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। যেমন সূরা আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। “তোমরা খাও এবং পান করো। তবে অপব্যয় করো না।” সূরা আসরা বা বনী ইসরাইলের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে “নামাজে স্বর উঁচুও করো না আবার অতিশয় ক্ষীণও করো না। বরং এ দুইয়ের মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। একই ভাবে সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “মুমিন ব্যক্তিরা যখন দান করে তখন তারা অপব্যয় করে না আবার কার্পণ্যও করে না। বরং তারা দুইয়ের মাঝামাঝি বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে।

সলাম ধর্মে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের ওপর অত্যন্ত জোর দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, “পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করো।” আবার সেখানে এও বলা হয়েছে যে, “তারা যদি তোমাকে মিথ্যা পথে পরিচালিত করতে চায় তবে তাদের আনুগত্য করবে না।” যারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকি এবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হওয়া কিংবা শুধু মানব সেবাকে এবাদত বলে মনে করে তাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআন বলেছে,”তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর।” এর একটি স্রষ্টার সাথে সম্পর্কিত এবং অন্যটি মানুষের সাথে সম্পর্কিত এবাদত।

সূরা ফাতেহার ৬ নম্বর আয়াতে আমাদের জন্য শিক্ষনীয় হলো, সিরাতে মুস্তাকিম বা সরল পথই হলো কল্যাণের পথ। সরল সোজা পথে কোন বাঁক নেই এবং সবচেয়ে কম সময়ে এ পথ তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে। এ জন্যেই সঠিক পথ নির্বাচন এবং এ পথে টিকে থাকার জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কারণ আমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে পারি। এ যাবত জীবন চলার পথে কোন বিভ্রান্তির মধ্যে না পড়লেও এটা কখনোই ভাবা ঠিক নয় যে, পরবর্তী জীবনেও সঠিক পথে চলতে পারবো। সমাজে বহু মানুষ পাওয়া যাবে যারা সারা জীবন মুমিন ছিলেন কিন্তু যখন অর্থ-সম্পদ বা কোন পদ লাভ করেছেন তখন খোদাকে ভুলে গেছেন। সরল সঠিক পথ চেনা কঠিন কাজ। তাই পরবর্তী আয়াতে এ পথের বাস্তব আদর্শ এবং যারা ঐ পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদের পরিচয় আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।

সূরা ফাতেহার ৭ম আয়াত হলো,

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7

হে আল্লাহ!) আমাদেরকে ওই ব্যক্তিদের পথে পরিচালিত কর, যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছো। তাদের পথে নয় যারা ক্রোধের শিকার এবং পথভ্রষ্ট।” (১:৭)

মানুষ মূলতঃ ৩টি দলে বিভক্ত। এক দল আল্লাহর পথ বেছে নেয় এবং আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধান অনুযায়ী নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন পরিচালনা করে। এ দল সবসময় আল্লাহর রহমত, অনুগ্রহ ও দয়া লাভ করে। প্রথম দলের বিপরীতে আরেকটি দল রয়েছে যারা সত্য চেনার পরও আল্লাহকে ছেড়ে গায়রুল্লাহকে বেছে নেয় এবং নিজের কামনা-বাসনা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন ও সমাজের ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর প্রাধান্য দেয়। এ দলের লোকদের মধ্যে তাদের কাজ-কর্ম ও আচার-আচরণের প্রভাব ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকে, ফলে তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। তারা আল্লাহর সান্নিধ্য এবং দয়া লাভের পরিবর্তে ধ্বংসের অতল গহ্বরে পতিত হয়,আল্লাহর গজবে তাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়। এই আয়াতে এ দলকে “মাগদুবি আলাইহিম” বা গজবে নিপতিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তৃতীয় আরেকটি দল রয়েছে যাদের কোন সুনির্দিষ্ট পথ নেই এবং কোন্‌ পথে চলবে তা ঠিক করতে পারে না তারা। তারা আসলে দিকভ্রান্ত এবং বিভ্রান্ত। এ আয়াতে তাদেরকে “দাল্লিন” বা পথভ্রষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন একেক পথ বেছে নেয় ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না।

আমরা প্রত্যেক নামাজে যে বলি- “হে আল্লাহ! আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর, তাদের পথ যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছো। অর্থাৎ নবী-রসূল, ওলী-আওলিয়া ও সৎ কর্মশীলদের পথে আমাদেরকে পরিচালিত কর। তাদের পথে আমাদেরকে পরিচালিত করো না যারা ঐশি আদর্শ ও মানবিকতা থেকে দূরে সরে গেছে, তোমার ক্রোধের শিকার, দিক-ভ্রান্ত এবং একেক দিন একেক রূপ ধারণ করে। এখানে একটি প্রশ্ন জাগে, তাহলো-ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট কারা? এর উত্তর হলো পবিত্র কোরআনে বহু দল ও ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট ও ক্রোধের শিকার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে একটি স্পষ্ট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।

কোরআনে বনি ইসরাইলের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে এবং হযরত মূসা (আ.) কিভাবে তাদেরকে ফেরাউনের নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছেন তারও বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বনী ইসরাইল বংশের লোকেরা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলায় আল্লাহ তাদেরকে ওই যুগের সব মানুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার ৪৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-“আমি তোমাদেরকে বিশ্বে সবার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।” কিন্তু এই বনী ইসরাইল জাতিই তাদের আচরণের জন্য আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে- “তারা আল্লাহর গজবের শিকার হয়েছে।” কারণ ইহুদী পুরোহিতরা আসমানী গ্রন্থ তৌরাতের বিধান বিকৃত করেছিল। তাদের মধ্যে যারা ব্যবসায়ী ও ধনী তারা সুদ গ্রহণ ও হারাম ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছিল। এত সব বিকৃতি ও অন্যায় দেখেও বনী ইসরাইল জাতির ভালো ও সৎ লোকেরা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, সমাজের অন্যায় ও পাপাচারের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত এ জাতি সম্মান ও মর্যাদার শীর্ষ থেকে অপমান ও ধ্বংসের মধ্যে পতিত হয়।

 

 

 

 

 

 

 

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.