আল-কুরআন

সূরা ফাতেহা: আয়াত ২-৫

(নূর বার্তা সস্থা)সূরা ফাতেহার দ্বিতীয় আয়াত হলো-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2
“সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।” (১:২)

আল্লাহর নাম ও তাঁকে স্মরণ করার পর আমাদের প্রথম কাজ হলো- আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। জগতের সব কিছুই তাঁর হাতে। আসমান-জমিনের সকল জীব-জন্তু, গাছ-পালা ও জড়বস্তু তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। হ্যাঁ, আল্লাহই মৌমাছিকে শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে খাবার সংগ্রহ করতে হবে এবং কীভাবে মধুর চাক তৈরী করতে হবে। তিনি পিঁপড়াকে শীতের খাদ্য জমা করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই একটি ধান থেকে অসংখ্য ধানের শীষের জন্ম দেন এবং আপেলের ক্ষুদ্র বীজ থেকে আপেল গাছ তৈরী করেন। তিনিই এই বিস্তীর্ণ আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং আসমানের প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্রের কক্ষপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

(নূর বার্তা সস্থা)সূরা ফাতেহার দ্বিতীয় আয়াত হলো-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2
“সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।” (১:২)

আল্লাহর নাম ও তাঁকে স্মরণ করার পর আমাদের প্রথম কাজ হলো- আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। জগতের সব কিছুই তাঁর হাতে। আসমান-জমিনের সকল জীব-জন্তু, গাছ-পালা ও জড়বস্তু তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। হ্যাঁ, আল্লাহই মৌমাছিকে শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে খাবার সংগ্রহ করতে হবে এবং কীভাবে মধুর চাক তৈরী করতে হবে। তিনি পিঁপড়াকে শীতের খাদ্য জমা করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই একটি ধান থেকে অসংখ্য ধানের শীষের জন্ম দেন এবং আপেলের ক্ষুদ্র বীজ থেকে আপেল গাছ তৈরী করেন। তিনিই এই বিস্তীর্ণ আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং আসমানের প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্রের কক্ষপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

এই আল্লাহ আমাদেরকে দুর্গন্ধময় পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং মাতৃগর্ভে ধীরে ধীরে পরিপুষ্ট করে তুলেছেন। জন্মের পর আমাদের জন্য বেড়ে ওঠার উপকরণ দান করেছেন। আমাদের দেহকে এমনভাবে তৈরী করেছেন যাতে অসুখ-বিসুখের মোকাবেলা করতে পারে কিংবা হাড় ভেঙ্গে গেলে জোড়া লাগাতে পারে এবং দেহে রক্তের প্রয়োজন হলে পুণরায় রক্ত উৎপাদন করতে পারে। আল্লাহর হাতে যে শুধু আমাদের দৈহিক বৃদ্ধি ও লালন-পালনই নির্ভর করছে তাই নয়, আমাদের আত্মিক ও মানসিক গঠন, বিকাশ ও পথপ্রদর্শন তাঁরই হাতে। তিনি আমাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন এবং আমাদেরকে গড়ে তোলার জন্য প্রেরণ করেছেন আসমানী গ্রন্থ ও নবী-রাসূল।

 

যাই হোক, সূরা ফাতেহার এই আয়াত থেকে আমরা যে শিক্ষা লাভ করি তা হলো- শুধু জন্ম ও সৃষ্টির ক্ষেত্রেই আমরা আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল নই বরং আমাদের প্রতিপালনও তাঁর হাতে। সৃষ্টির সাথে তাঁর সম্পর্ক চিরস্থায়ী ও অবিচ্ছেদ্য। তাই আমাদেরও উচিত তাঁর দেয়া নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। আরেকটি বিষয় হলো- শুধু দুনিয়াতেই নয়, কেয়ামতের দিনও বেহেশতবাসীরাও আল্লাহর দেয়া অফুরন্ত নেয়ামত ও পুরস্কারের কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলবে-“আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন”। অর্থাৎ “সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।”

এই সূরার তৃতীয় আয়াতটি হলো-

الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ (3

“যিনি পরম করুণাময় অসীম দয়ালু।” (১:৩)

সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ হলেন-দয়ালু, ক্ষমাপরবশ ও পরম দয়াময়। আমাদের জন্য তিনি যে অশেষ নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন সে সবের মধ্যে প্রতিনিয়ত তাঁর দয়া ও ভালোবাসা দেখতে পাই। সুন্দর ও সুগন্ধি ফুল, সুস্বাদু ফল-মূল, মজার মজার খাবার, রং-বেরঙের পোশাক এ সব কিছু আমাদের জন্য আল্লাহর দান। সন্তানের প্রতি ভালবাসাকে তিনি মায়ের মন ও প্রাণে সঁপে দিয়েছেন এবং তিনি আমাদের প্রতি যে কোন মায়ের চেয়ে দয়ালু। আল্লাহর যে শাস্তি ও ক্রোধ তা কেবল গুনাহগার বান্দাদেরকে সাজা দেয়ার জন্য। কোন রকম বিদ্বেষ বা প্রতিহিংসাবশত: নয়। তাই আমরা যদি তওবা করি এবং অতীতের অপরাধ পুষিয়ে নেই তাহলে তিনি আমাদের গুনাহ ও পাপকাজ ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের দোষ ত্রুটি ঢেকে রাখেন।

সূরা ফাতেহার তৃতীয় আয়াত থেকে আমাদের জন্য কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো: আল্লাহপাক তাঁর সৃষ্টিকে দয়া ও ভালোবাসা দিয়ে প্রতিপালন করেন। কারণ রাব্বিল আলামীনের আগে এবং পরে তিনি আর রাহমানির রাহিম হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিপালনকে দুই দয়ার মাঝে স্থান দিয়েছেন। প্রতিপালন ও শিক্ষাদান দয়া ও ক্ষমা দিয়ে শুরু হয়েছে এবং দয়া ও ক্ষমা দিয়েই সম্পন্ন হয়। তাই সমাজের শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকরা যদি সফল হতে চান, তাহলে তাদেরকেও প্রেম, দয়া ও ভালবাসা নিয়ে কাজ করতে হবে।
সূরা ফাতেহার ৪র্থ আয়াতে বলা হয়েছে-

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4

“বিচার দিনের মালিক।” (১:৪)

আরবী দ্বীনশব্দটির অর্থ- ধর্ম ও মতবাদ।এ শব্দটি পুরস্কার ও প্রতিদান অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এখানে ইয়াওমিদ্দিনএর অর্থ হলো পুনরুত্থান দিবস। যে দিন সব কাজের হিসাব-নিকাশ, প্রতিদান, শাস্তি ও পুরস্কার দেয়া হবে। অবশ্য এখানে একটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার, আর সেটি হলো আল্লাহপাক দুনিয়ারও প্রভু আবার আখেরাতেরও প্রভু। কিন্তু কেয়ামতের দিন তার মালিকানা ও প্রভুত্বের রূপ হবে ভিন্ন। সে দিন কেউ কোন কিছুর মালিক নয়। অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কিছুই নিজের বলে থাকবে না। বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনও কোন কাজে আসবে না। এমনকি নিজ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপরও মানুষের কোন অধিকার থাকবে না। না মুখ ও জিভ কোন অজুহাত দেখাতে পারবে, না মস্তিস্ক চিন্তার সুযোগ পাবে। একমাত্র আল্লাহই হবেন সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান ও নিয়ন্ত্রণকারী।

এই আয়াতটি থেকে আমাদের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো- পূর্বের আয়াতে আল্লাহর অশেষ দয়ার প্রতি আশাবাদী হবার পাশাপাশি কেয়ামতের দিনের বিচার ও হিসাব-নিকাশের ব্যাপারেও চিন্তা করতে হবে। বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস থাকায় আমাদের ভয় ও শঙ্কার কিছু নেই। কারণ দুনিয়ার সব ভালো কাজের পুরস্কার ও প্রতিদান ওই দিন দেয়া হবে। এ আয়াতের আরেকটি শিক্ষণীয় দিক হলো- আল্লাহপাক আমাদের ভালো-মন্দ সব কাজ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত এবং সে সব মন্দ কাজের শাস্তি ও ভালো কাজের পুরস্কার দানে সক্ষম।
সূরা ফাতেহার পঞ্চম আয়াতটি হলো-

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5

“আমরা শুধু তোমারই উপাসনা করি এবং একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই।” (১:৫)

এর আগের আয়াতগুলোয় আমরা আল্লাহর কিছু গুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমরা জেনেছি যে, তিনি “রহমান”, “রাহীম”, “রাব্বুল আলামিন” এবং বিচার দিনের মালিক। এ ছাড়াও এ অন্তহীন বিশ্বজগত এবং আমাদের প্রতি তাঁর দয়া ও নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেছি “আলহামদুলিল্লাহে রাব্বিল আলামীন”। তাই আমাদের কর্তব্য হলো তাঁর দরবারে নিজের অক্ষমতা ও দুর্বলতা তুলে ধরে বলা যে-আমরা একমাত্র তোমারই বান্দা এবং একমাত্র তোমার নির্দেশ ছাড়া অন্য কারো কাছে বা নির্দেশের সামনে মাথা নত করবো না। আমরা দুনিয়ার ধন দৌলতের পূজারী নই এবং শোষক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিরও গোলাম নই। ব্যক্তিগত ও সামাজিক ধর্ম ইসলামের সর্বশেষ উপাসনা নামাজ জামাতে আদায় করা হয়। তাই মুসলমানরা একই কাতারে একই সঙ্গে, এক বাক্যে বলে “ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন।” অর্থাৎ “হে পরওয়ারদেগার! শুধু আমি নই, আমরা সবাই তোমার বান্দা এবং তোমার কাছ থেকেই সাহায্য কামনা করি। হে আল্লাহ! এমনকি আমাদের এবাদতও তুমি শক্তি ও সামর্থ্য দিয়েছ বলেই আঞ্জাম দিতে পারছি। তুমি আমাদের সাহায্য না করলে অন্যদের গোলাম ও দাসে পরিণত যাবো।”

এবার সূরা ফাতেহার ৫ম আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরছি।
এ আয়াতের প্রথম শিক্ষণীয় দিক হলো-আমরা সৃষ্টি জগতে যে একটি ব্যবস্থা বিরাজ করছে তা স্বীকার করি। তবে মনে করি এ হলো আল্লাহর প্রজ্ঞার নিদর্শন এবং এসব তারই ইচ্ছার অধীন। তাই আমরা আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করি
; প্রকৃতির হাতে বন্দী নই। আর এমনকি বস্তুগত বিষয়েও তার সাহায্য প্রার্থনা করি। এ আয়াত থেকে আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রত্যেক নামাজে যদি আমরা গভীর উপলদ্ধির সাথে বলি যে, আমরা কেবল তোমারই বান্দা; তাহলে আমাদের মধ্য থেকে গর্ব, অহঙ্কার ও ঔদ্ধত্য দূর হয়ে যাবে।

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.