তাফসীর

ঐশী আতিথ্যের মাস-রমজান : ২০১৩ (৩য় পর্ব)

রাসূলে কারিম ( সা ) বলেছেন, আমার অনুসারীদের মধ্যে যারা বেহেশতে যাবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই যাবে দুটি কারণে,একটি হলো আল্লাহকে ভয় করা এবং অপরটি হলো সদাচার বা সদ্ব্যবহার করা।আল্লাহকে ভয় করার মানেই হলো তাকওয়াবান হওয়া। আর তাকওয়াবান তারাই যাদের বিবেক-বুদ্ধি,মেধা-বিচক্ষণতার ক্ষেত্রে পূর্ণতা রয়েছে। আর যাদের মধ্যে এই গুণাবলীগুলো রয়েছে তারা অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি সংযত,সুসংহত এবং পরিশীলীত আচার-আচরণ করবেন-এটাই স্বাভাবিক।রমযান এলেই মানুষের মাঝে এই গুণাবলীগুলো অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশিই লক্ষ্য করা যায়। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই ঘোষণা করেছেন, তোমাদের ওপর এবং তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য হলো তোমাদের মাঝে তাকওয়া সৃষ্টি করা।

রাসূলে কারিম ( সা ) বলেছেন, আমার অনুসারীদের মধ্যে যারা বেহেশতে যাবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই যাবে দুটি কারণে,একটি হলো আল্লাহকে ভয় করা এবং অপরটি হলো সদাচার বা সদ্ব্যবহার করা।আল্লাহকে ভয় করার মানেই হলো তাকওয়াবান হওয়া। আর তাকওয়াবান তারাই যাদের বিবেক-বুদ্ধি,মেধা-বিচক্ষণতার ক্ষেত্রে পূর্ণতা রয়েছে। আর যাদের মধ্যে এই গুণাবলীগুলো রয়েছে তারা অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি সংযত,সুসংহত এবং পরিশীলীত আচার-আচরণ করবেন-এটাই স্বাভাবিক।রমযান এলেই মানুষের মাঝে এই গুণাবলীগুলো অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশিই লক্ষ্য করা যায়। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই ঘোষণা করেছেন, তোমাদের ওপর এবং তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর রোযা ফরয করার উদ্দেশ্য হলো তোমাদের মাঝে তাকওয়া সৃষ্টি করা।

হযরত আলী (আ) এর একটি বাণী এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন,সদাচার এবং প্রশস্ত ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের আয়-উপার্জন বাড়িয়ে দেয়। দারিদ্র্যক্লিষ্ট জনগোষ্ঠির জন্যে হযরত আলী ( আ ) এর এই বাণীটি অনুশীলনযোগ্য।

 

ব্রিটিশ মনীষী প্রখ্যাত স্যামুয়েল স্মাইলস বলেছেন,পৃথিবীকে গতিময়তার দিকে পরিচালিত করার মতো যতো শক্তি রয়েছে তার মধ্যে উন্নত আচার-আচরণ একটি।প্রকৃতপক্ষে আদব-কায়দা হচ্ছে মানুষের স্বভাবেরই চূড়ান্ত বহিপ্র্রকাশ। কিন্তু এইসব চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য জন্মগত নয়,বরং এইসব গুণাবলী অর্জন করতে হয়। আর তা অর্জন করার শ্রেষ্ঠ সময় হলো রমযান মাস। কারণ রোযা নষ্ট হয়ে যায়-এই ভয়ে রোযাদারকে বহু ধরনের প্রবৃত্তি তাড়িত কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে হয়।কেননা মিথ্যাকথা বলা,পরনিন্দা করা,কুটনামি করা,মিথ্যা শপথ করা,কামভাবের সাথে কারো দিকে তাকানো-এগুলো রোযা নষ্ট করে দেয়।তাই সংযমী হতে হয় রোযাদারকে।আর এই যে সংযম-তা একান্তই আল্লাহর জন্যে। কেননা হাদীসে এসেছে,আল্লাহ নিজেই বলেছেন ইয়াদুড়্ শাহওয়াতাহু ওয়া ত্বোড়ামাহু মিন আজলিঅর্থাৎ রোযাদার আমারই কারণে,আমারই নির্দেশ পালনে এবং আমারই সন্তোষ বিধানের উদ্দেশ্যে তার প্রবৃত্তিকে দমন করে,পানাহার পরিহার করে।রমযান তাই মানুষকে সংযম এবং সদাচার শিক্ষা দেয়।

আর এই সংযম যদি পালন করা না হয়,তাহলে রোযাদার কেবল উপোসই করবে শুধু,ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কষ্টই পাবে শুধু,তার রোযা তার জন্যে কোনো ফল বয়ে আনবে না। কেননা হাদীসে পাকে বলা হয়েছে অনেক রোযাদার আছে,ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট ছাড়া তাদের রোযা থেকে আর কোনো ফল লাভ হয় না। সুতরাং রোযাকে অযথা অসংযমের কারণে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। তাই আচার-আচরণ সুন্দর করতে হবে। মিথ্যাবাদিতার চর্চা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের সামনে মিথ্যা বলা বা সত্যের বিরোধী আচরণ পরিহার করা অথ্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ছেলেমেয়েরা তাদের পরিবার এবং চারদিকের লোকজনের কাছ থেকেই আচার-আচরণ,কথাবার্তা,কাজকর্ম ইত্যাদি শেখে। এই শিক্ষা এবং এই উপলব্ধি আমরা রমযান মাসে পেয়ে থাকি। তবে এই গুণাবলীগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় আল-কোরআন। তাই রোযা রাখার পাশাপাশি বেশি বেশি করে কোরআন পড়া খুবই জরুরী। কোরআন বুক শেল্ফ থেকে জায়নামাযের রেহেলে পঠিত হোক-এই কামনা করছি।

আলোচনার এ পর্যায়ে রোযাদারদের জন্যে কিছু খুশির খবর দিচ্ছি। এমনিতেই রমযান মাস এলে প্রকৃত রোযাদারগণ বা মুসলমানেরা আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। এ আনন্দ অনাবিল,স্বতস্ফূর্ত এবং প্রকাশ্য। রমযানের সূচনাতেই খুশির একটা আমেজ সর্বত্র লক্ষ্য করা যায়। এটা আল্লাহর একটা বিশেষ রহমত। পবিত্র কোরআনের সূরা ইউনূসের ৫৮ নম্বরে আয়াতে যেমনটি আল্লাহ বলেছেন,বল!এটা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে,এটা তার চেয়েও উত্তম। পার্থিব কোনো সম্পদের সাথে তো আল্লাহর রহমতের তুলনা চলে না। রাসূল বলেছেন,যে ব্যক্তি রমযান মাসের কল্যাণ ও রহমত থেকে বঞ্চিত হলো,সেমূলত সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। সুখরটি হলো-

রাসূলে খোদা বলেছেন,রাইয়্যান নামে বেহেশতের একটি দরোজা আছে। কিয়ামতের দিন ঐ দরোজা দিয়ে কেবলমাত্র রোযাদাররাই প্রবেশ করবে। রোযাদারদেরকে ডেকে ডেকে বেহেশতে প্রবেশ করানোর পর ঐ দরোজাটি বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যত্র বলা হয়েছে যে লোকই সেই দ্বারপথে প্রবেশ করবে,সে-ই পান করবে। আর যে-ই পান করবে,সে আর কোনোদিন পিপাসার্ত হবে না। এই হাদীসে উল্লেখিত রাইয়্যান শব্দটির অর্থই হলো সদাপ্রবহমান প্রস্রবণ। অতএব রোযাদার বন্ধুরা!ক্ষুধা-তৃষ্ণাকে উপেক্ষা করে সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করুন-আর পরকালে ব্যতিক্রমধর্মী পুরস্কার ও মর্যাদা লাভের সৌভাগ্য অর্জন করুন।

সবশেষে হযরত সালমান ফারসি ( আ ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসের অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করছি। রাসূলে খোদা বলেছেন…. রমযান সবর,ধৈর্য ও তিতীক্ষার মাস।আর সবরের প্রতিফল হলো আল্লাহর কাছ থেকে জান্নাত প্রাপ্তি।এটা পারস্পরিক হৃদ্যতা এবং সৌজন্য প্রদর্শনের মহিমা। এ মাসে মুমিনের রেযক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি রোযাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দেবেন।তাকে আসল রোযার সওয়াব দেওয়া হবে কিন্তু সেজন্যে রোযাদারের সওয়াব কমানো হবে না।……….. আর যে ব্যক্তি এই মাসে নিজের অধীন লোকদের শ্রম-মেহনত হাল্কা বা হ্রাস করে দেবে,আল্লাহ তায়ালা তাকেঁ ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে দোযখ থেকে মুক্তি দেবেন। এই সুসংবাদ কেবল রোযাদারদের জন্যে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সুসংবাদের অধিকারী করে তুলুন। সবশেষে আসুন মোনাজাত করি,আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। (রেডিও তেহরান)

লেখক সম্পর্কে

administrator

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.