দোওয়া ও আমল সমূহ

গাদীর দিবসে হযরত আমিরুল মুমিনীন (আঃ)-এর যিয়ারত 

নূর বার্তা সংস্থা : গাদীর দিবসে অনেক আমল হাদিসে ও রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে। যেমন : গোসল করা, গাদীর দিবসের বিশেষ নামায পড়া, রোযা রাখা, দান খয়রাত করা, অন্যদের আপ্যায়ণ করা, উপহার দেওয়া, অনুরূপ এই দিনে বিশেষ যিয়ারতও বর্ণিত হয়েছে যেটি মুহাদ্দীসে কুম্মী (রহঃ) নিজের দোয়ার পুস্তকে মোফাতিহুল জিনানে লিপিবদ্ধ করেছেন। নিম্নে সেই যিয়ারতের বাংলা অনুবাদ আপনাদের কাছে উপস্থাপন করা হল :

হে আল্লাহ্! আমি তোমার প্রিয় মোহাম্মদ (সাঃ) এবং তোমার প্রিয় ওলীর ওসিলায় এবং যে মর্যাদা তুমি শুধু তাদের দু’জনকেই দান করেছ, অন্য কাউকে নয় সেই মর্যাদার ওসিলা দিয়ে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি মোহাম্মদ এবং আলী (উভয়ের উপর সালাম)-এর উপরে দরূদ বর্ষণ কর। আর যে কোনো আশু মঙ্গল ও কল্যাণ সর্বাগ্রে তাদের প্রতি দান কর।

হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ এবং তাঁর বংশধরদের উপর দরূদ প্রেরণ করো যারা হলেন ইমাম, ঐশী বিধানের পরিচালক আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহ্বানকারী মহান নেতৃবৃন্দ, ঈমানের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রসম, মহাসত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন, বান্দাগণের নেতাবর্গ, দেশভূমির স্তম্ভস্বরূপ আর প্রেরিত উষ্ট্রী এবং অধ্যাত্ম জ্ঞান ও খোদা পরিচিতির বিশাল সাগর মাঝে মুক্তির তরণীসম।

হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের উপর দরূদ প্রেরণ করো যারা তোমার জ্ঞানের ভাণ্ডার, তোমার একত্ববাদ ও অধ্যাত্ম শিক্ষার মূল অঙ্গ, তোমার দ্বীনের খুঁটি আর তোমার দয়া ও দাক্ষিণ্যের খনি, তোমার সৃষ্টিকুলের সেরা ও বাছাইকৃত এবং তাদের মধ্যে তোমার কর্তৃক নির্বাচিত ও মনোনীত। তারা তোমার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে অধিকতর খোদাভীরু, পুত পবিত্র, সৎ ও মহান। আর বিপদগ্রস্ত লোকদের জন্য দরবার সম যে কেউ এ করুণা ভরা দরবারের শরণাপন্ন হয় মুক্তি লাভ করে। আর যে কেউ অস্বীকৃতি জানায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

হে আল্লাহ্! মোহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের উপরে দরূদ প্রেরণ কর যারা আহল এবং নির্বাচিত। মানুষকে তুমি নির্দেশ দিয়েছ ঐশী জ্ঞানের ব্যাপারে তাদের কাছে প্রশ্ন করতে আর তারা হলেন রাসূলের নিকটাত্মীয় । যাদেরকে ভালবাসতে তুমি আদেশ করেছ। আর তাদের অধিকার প্রদান করাকে তুমি সকলের উপর ফরয করেছ এবং বেহেশতকে তাদেরই আবাসস্থল নির্ধারণ করেছ যারা তাদের অনুসারী।

হে আল্লাহ্ মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের উপর দরূদ প্রেরণ কর। কেননা মানুষদেরকে তারা তোমার আনুগত্য করার আদেশ করেছেন এবং তোমার অবাধ্য হওয়া থেকে বারণ করেছেন। আর বান্দাদেরকে তোমার একত্ববাদের প্রতি পথ নির্দেশনা দান করেছেন।

প্রতিপালক! তোমার কাছে প্রার্থনা জানাই মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের উপর দরূদ প্রেরণ কর, মুহাম্মদ তোমার বাণী বাহক ও নির্বাচিত এবং একনিষ্ঠ ও বিশ্বাস ভাজন ওহী প্রচারক তোমার বিশেষ বান্দা যাকে তুমি মানুষের কাছে প্রেরণ করেছ তাঁর ওসিলায়। আর আমিরুল মুমিনীনের ওসীলায় যিনি দ্বীনের কাণ্ডারী এবং জগতের পূণ্যবানদের প্রথম ও সূচনা। মহানবীর সেই বিশ্বস্ত উত্তরসূরী ও মহান সত্যবাদী, হক ও বাতিলের মধ্যে পূর্ণ পৃথককারী তোমারই স্বাক্ষী ও প্রতিনিধি তোমার সৃষ্টিকে তোমার দিকেই পরিচালনাকারী যিনি তোমার নির্দেশকে বাগ্মী কণ্ঠে জগতবাসীকে পৌঁছে দিয়েছেন। আর তোমার দ্বীনের পথে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, বদনামকারীদের ভর্ৎসনার ভয় তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। অত:পর গাদীরের এই পবিত্র দিনে আমাকে (আল্লাহ্, রেসালাত এবং বেলায়েতের) যথাযথ পরিচয়সম্পন্ন করে দাও, যে দিনে খেলাফতের অভিষেক এবং আলীর বেলায়েতকে সৃষ্টির স্কন্ধে অর্পণ করেছ। আর দ্বীনকে তার বেলায়েত দ্বারা পরিপূর্ণতা দান করেছ। আর এই দিনের ওসিলায় এবং যে মুমিনরা এ দিনের মর্যাদাকে স্বীকার করে তাদের ওসিলায় আমাকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো এবং তোমার দানকৃত করুণার প্রতি ঈর্ষাকারীদের হাত থেকে আমাকে নিরাপদ রাখ।

হে আল্লাহ্! যেভাবে তুমি এ দিনকে সবচেয়ে বড় খুশির দিনে পরিণত করেছ এবং আসমানে এ দিনকে নাম দিয়েছ চুক্তি ও অঙ্গীকার দিবস, আর জমিনে এর নাম দিয়েছ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ ও সম্মিলিত প্রশ্ন দিবস (অর্থাৎ এ দিনের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সকলকে প্রশ্ন করা হবে যে বেলায়েতের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছে নাকি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে)- এ দিনের ওসিলায় মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের উপর তুমি দরূদ প্রেরণ কর। আর তাঁদের সৌন্দর্য পবিত্রতা দিয়ে আমাদের চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে দাও। তাঁর ওসিলায় আমাদের ভেদ-বিভক্তির বিলোপ ঘটাও। আর হেদায়েতের নেয়ামত লাভ করার পর আমাদেরকে বিচ্যুতি ও পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা কর। আমাদেরকে তোমার করুণাসমূহের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করো। হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দয়াবান, সেই আল্লাহর প্রশংসা জানাই যিনি এই দিনের মর্যাদা ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদেরকে পরিচিত করেছেন আর এর সম্মান রক্ষায় আমাদেরকে সুদৃষ্টির অধিকারী করেছেন। আর এ দিনের সুবাদে মুসলমানদেরকে সম্মানিত করেছেন এবং এর মূল্যায়নের সৌভাগ্য আমাদেরকে দান করেছেন। হে আল্লাহর রাসূল এবং হে ঈমান আনয়নকারীদের নেতা! আমার পক্ষ থেকে আপনারা দুই মহান বুজুর্গ, ইতরাত এবং আপনাদের বন্ধুদের প্রতি সশ্রদ্ধ ও সর্বোত্তম সালাম বর্ষিত হোক। যতদিন পর্যন্ত দিন রাত্রির আগমন প্রস্থান চলতে থাকবে। আমি আপনাদেরকে আমার এবং আপনাদের আল্লাহর সম্মুখে আমার মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য এবং আমার কঠিন কাজগুলো সহজ হওয়ার জন্য ওসিলা গ্রহণ করছি।

প্রভৃ আমার! মোহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের ওসিলায় তোমার কাছে প্রার্থনা জানাই যে মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের উপর দরূদ প্রেরণ কর। আর এ দিনকে অস্বীকারকারীদের এবং এর সম্মানের বিরোধিতা কারীদেরকে (যারা গাদীর দিবসের আলী (আঃ)-এর বেলায়েতের অঙ্গীকার ভেঙ্গে) তোমার দ্বীনের পথকে মানুষের সামনে বন্ধ করে দিয়েছে যাতে তোমার আলোকে নিভিয়ে দিতে পারে তাদের উপর তোমার অভিসম্পাত দাও। তবে মহান আল্লাহ্ সৃষ্টিকুলের উপর তাঁর ওহীর নূর ও হুজ্জাতের প্রদীপকে প্রজ্জ্বলিত করা ব্যতীত অন্য কিছু করবেন না।

হে সৃষ্টিকর্তা! তোমার নবী মুহাম্মদের আহলে বাইতের জন্য প্রশস্ততা দান কর এবং তাদের দুঃখ ও কষ্টগুলোকে লাঘব কর। আর তাদের কল্যাণে মুমিনদের অন্তর থেকে দুঃখ ও বেদনাকে (বিশেষ করে ইমামে জামানার বিরহ বেদনাকে) দূর করে দাও।

হে পালনকর্তা! তাঁদের উপস্থিতি দ্বারা জমিনকে ন্যায় ও ইনসাফ দ্বারা ভরে তোল, যেমনভাবে তা ভরে উঠেছে। অত্যাচার ও শত্রুতার দ্বারা। আর তাদেরকে দেয়া স্বস্তির প্রতিশ্রুতি ও ঐশ্বরিক শাসন ব্যবস্থারই অঙ্গীকারকে তুমি পূর্ণ কর। তুমি তো কখনোই অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না।

[সূত্র : শেখ আব্বাস কোম্মী, মাফাতিহুল জিনান, ঈদে গাদীর দিবসের আমল অংশ দ্রষ্টব্য]

লেখক সম্পর্কে

Admin

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.