আকাঈদ

হজরত আলী আকবর (আ.) এর শাহাদত

নূরবার্তা সংস্থা: হজরত আলী আকবর (আ.) ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.) এর কলিজার টুকরা। তিনি ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.) এর বড় সন্তান। তাঁর কথাবার্তা, সীরাত ছিল তার পূর্ব পুরুষ রাসুল (সা.) এর মতো। যারাই রাসুল (সা.) কে দেখার ইচ্ছা পোষণ করতেন তারাই তাকে নয়ন ভরে দেখতেন। যেমনভাবে তার বাবা তার কারবালার ময়দানে যুদ্ধে যাবার পূর্বে বলেছিলেনঃ
হে খোদা তুমি সাক্ষ্য থেক এমন এক যুবক তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাচ্ছে যে হচ্ছে তোমার রাসুল (সা.) এর প্রতিচ্ছবি তার কথাবার্তা ও সীরাত হচ্ছে তোমার রাসুল (সা.) এর ন্যায় আমি যখনই রাসুল (সা.) কে দেখতে চাইতাম তখন আলী আকবর কে দেখতাম।
হজরত আলী আকবর (আ.) কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.) এর সেনাবাহিনীতে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করছিলেন।

ইমাম হুসাইন (আ.) হজরত আলী আকবরের শাহাদতকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেনঃ
সালাম হোক হে হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর বংশের প্রথম শহীদ! দুরুদ ও সালাম হোক তোমার ও তোমার পিতার প্রতি। অতঃপর তিনি তার সম্পর্কে বলেনঃ খোদা ঐ দলকে ধ্বংস করুক যে তোমাকে হত্যা করেছে। হে আমার সন্তান! তাদের কি সাহস যে তারা দয়ালু খোদাকে উপেক্ষা করে তারা এমন এক কাজ সম্পাদন করেছে, তারা রাসুল (সা.) এর প্রতিচ্ছবির অবমাননা করেছে। এমন দুনিয়ার কোন মূল্যই আমার কাছে নেই।

আলী আকবর (আ.) কে কিভাবে শহীদ করা হয়ঃ
শেখ সাদুক (রহ.) ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন আলী আকবর (আ.) শত্রুদের মুকাবেলায় যুদ্ধের ময়দানে যায় তখন ইমাম হুসাইন (আ.) এর চোখ অশ্রুতে ভরে যায় এবং তিনি বলেনঃ হে খোদা তুমি তার সাক্ষ্য থেক যে, রাসুল (সা.) প্রতিচ্ছবি তাদের সাথে লড়াই করার জন্য যাচ্ছে।
সৈয়দ ইবনে তাউস এ সম্পর্কে লিখেছেন যে, আলী আকবর (আ.) ছিলেন সুন্দর মানবের প্রতিমা স্বরূপ তিনি বাইরে আসেন এবং তার বাবার কাছে যুদ্ধের অনুমতি চান। ইমাম (আ.) ও তাকে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দেন এবং হতাশ নয়নে তার পানে চেয়ে থাকেন এবং এক সময় মাথা নত করে ক্রন্দন করতে থাকেন এবং বলেনঃ হে খোদা তুমি সাক্ষ্য থেক এমন এক যুবক তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাচ্ছে যে হচ্ছে তোমার রাসুল (সা.) এর প্রতিচ্ছবি তার কথাবার্তা ও সীরাত হচ্ছে তোমার রাসুল (সা.) এর ন্যায় আমি যখনই রাসুল (সা.) কে দেখতে চাইতাম তখন আলী আকবর কে দেখতাম।
এক সময় তিনি চিৎকার করে বলেনঃ হে সাআদের পুত্র! খোদা যেন তোমাকে তার রহমত থেকে বঞ্চিত করুক যেমনভাবে তুমি আমার পুত্রকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছ। (আল মালহুফ, পৃষ্ঠা ১৬৬)
আলী আকবর (আ.) যুদ্ধের রণক্ষেত্রে আসে এবং যুদ্ধ শুরু করে এবং ১০জন এজিদী সৈন্য বাহিনীকে হত্য করে এবং পুণরায় তার বাবার কাছে ফিরে আসেন এবং বলেন হে বাবা! আমি খুবই পিপাসিত। ইমাম হুসাইন (আ.) বলেনঃ হে আমার সন্তান, ধৈর্য ধারণ কর। তোমার পিতামহ তোমার জন্য বেহেস্তে পানি হাতে অপেক্ষা করছেন। উক্ত কথাটি শোনার পর তিনি আবার যুদ্ধের ময়দানে ফিরে যান এবং যুদ্ধ করতে থাকেন এবং প্রায় ৪৪ জন এজিদী বাহিনীকে হত্যা করেন।(আমালী সাদুক্ব, পৃষ্ঠা ২২৬, হাদীস নং ২৩৯)
তারিখে তাবারীতে আবু মাখনাফের বর্ণনামিতে লিখেছেনঃ যোহায়র বিন আব্দুর রহমান আমার কাছে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আলী আকবর (আ.) শত্রুদের উপরে হামলা করলে মাররা বিন মানক্বায তাকে দেখে এবং পিছন থেকে তাকে লক্ষ্য করে বর্ষা ছুড়ে মারে এবং পরে তার মাথার মধ্যভাগে তরবারী দ্বারা আঘাত করলে আলী আকবর (আ.) সেই আঘাতে কারবালার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং চিৎকার করে বলে হে আমার বাবা! সালাম হোক তোমার উপর! (মালহুফ, পৃষ্ঠা ১৬৬)
শত্রুরা তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং তারবারী দ্বারা আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। ‍সুলাইমান বিন আবি রাসেদ বর্ণনা করেছেন যে, আমি নিজে শুনেছি যে, ইমাম হুসাইন (আ.) বলছিলেনঃ হে আমার সন্তান! খোদা তাকে হত্যা করুক যে তোমাকে হত্যা করেছে। তখন আমি এক নারীকে দেখলাম যে, উদিত সূর্যের ন্যায় বাইরে ছুটে আসে এবং বলতে থাকে হে আমার ভাই আমার ভাতিজা। আমি তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমাকে বলা হয় যে, সে হচ্ছে জয়নাব হজরত ফাতিমা (সা.আ.) এর কন্যা। তিনি ছুটে আসেন এবং আলী আকবর (আ.) এর লাশের উপরে পড়ে যান ইমাম হুসাইন (আ.) আসেন এবং তার হাত ধরে তাঁবুতে নিয়ে যান। তারপর তিনি আবার তাঁর পরিবারের কিছু যুবকদের সাথে নিয়ে আলী আকবরের লাশের কাছে ফিরে আসেন এবং বলেন তোমার ভাইকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাও। অতপর তারা তার পবিত্র লাশ মোবারককে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং তাঁবুতে রাখে ।(তারিখে তাবারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৪৬)

লেখক সম্পর্কে

Admin

মতামত জানান

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.