লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সবাইকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ টোরি দলের জ্যাক গোল্ডস্মিথকে ১৩.৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি।
নূরবার্তা সংস্থা: এমন ঐতিহাসিক জয় পাওয়া এ সাদিকের শুরুর জীবনটা মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। লন্ডন অভিবাসী এক পাকিস্তানী নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয়েছিল তার। বাস চালক বাবা আমানুল্লাহ ও দর্জি মা সেহেরুন খানের আট সন্তানের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথকে ৯ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম মুসলিম হিসেবে লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হলেন বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান।
গত বৃহস্পতিবার লন্ডন অ্যাসেম্বলি ও লন্ডনের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, লন্ডন অ্যাসেম্বলির ১৪টি আসনের আটটিতে বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে প্রথম পছন্দের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন সাদিক। সাদিকের প্রাপ্ত ভোট ৪৪ শতাংশ। আর প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক পেয়েছেন ৩৫ শতাংশ ভোট। লন্ডনের মেয়র পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ১২ জন।
যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা, সাদিক প্রথম মুসলিম এবং প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ, যিনি বহুসংস্কৃতির তীর্থখ্যাত এই মহানগরের মেয়র নির্বাচিত হলেন। একজন অভিবাসী বাসচালকের সন্তান হওয়ার কারণেও সাদিকের এমন অর্জন অন্য রকম তাৎপর্য বহন করছে। কনজারভেটিভ দলীয় মেয়র বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হবেন সাদিক।
স্থানীয় আর্নেস্ট বেভিন কলেজে লেখাপড়া করেন তিনি। সেখানেই তিনি প্রথম রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যোগ দেন সাদিক।
রাজনীতিতে অংশ নেয়ার পেছনে সাদিক কৃতিত্ব দেন তার সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজ বোখারিকে। যুক্তরাজ্যের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক এই নাজ বোখারিই সাদিককে প্রথম উপলব্ধি করিয়েছিলেন, ‘গায়ের রঙ বা পারিবারিক প্রেক্ষাপট তোমার জীবনকে গড়ে তোলার পথে বাধা নয়।’
প্রথমে দাঁতের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও এক শিক্ষকের পরামর্শে সেই ইচ্ছা বাদ দিয়ে আইন নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন সাদিক। ওই শিক্ষক তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি সারাক্ষণ তর্ক করো।
সাদিক খান কখনো তার মুসলিম ধর্মবিশ্বাসকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেননি। বরং এমপি হিসেবে দেয়া প্রথম বক্তব্যে তার বাবার শেখানো মোহাম্মদ (সা.)-এর হাদিস নিয়েও কথা বলেন।
গত বছর যখন লেবার পার্টির বাঘা বাঘা রাজনীতিকরা নিজ দল থেকে লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য লড়ছেন, সাদিক খান তখন সেদিক দিয়ে একজন চুনোপুঁটিই বলা যায়। মেয়র পদের ধারে কাছেও তাকে কেউ ভাবছে না। বেশিরভাগের দৃষ্টি ছিল টনি ব্লেয়ার আমলের ঝানু রাজনীতিক ব্যারোনেস জোয়েলের দিকে।
ব্যক্তি জীবনেই নন, কর্মজীবনেও বার বার সেই পেছন থেকেই সামনে উঠে এসেছেন। মেয়র নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম নেই। সবার অসমর্থিত এক প্রার্থী থেকে হয়ে উঠলেন লন্ডনের মেয়র।